করোনা: বাংলাদেশসহ ৫৯টি দেশকে ভ্রমণের লাল তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যের
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ৫৯টি দেশকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের লাল তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাজ্য।
একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদেরও এসব দেশ ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
দেশটির সরকারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আপনি যদি গত ১০ দিনের মধ্যে লাল তালিকাভুক্ত দেশে থাকেন, তাহলে কোনোভাবেই যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করতে পারবেন না। তবে ব্রিটেনের নাগরিক, আইরিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যে যাদের বসবাসের অনুমতি আছে তারা লাল তালিকাভুক্ত দেশ থেকে ব্রিটেন ভ্রমণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৯ দেশ ব্রিটেনের লাল তালিকাভুক্ত হলেও এই তালিকা থেকে রেহাই পেয়েছে ভারত, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। লাল থেকে বাদামি তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে ওই চার দেশ। এর ফলে এই চার দেশ থেকে কেউ যুক্তরাজ্য ভ্রমণে গেলে তাকে ১১ দিনের হোটেল কোয়ারেন্টাইনের বিল পরিশোধ করতে হবে না।
ব্রিটেনের সরকার সম্প্রতি তাদের ভ্রমণ বিধি-নিষেধে পরিবর্তন এনেছে; যা আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবে। যে কারণে যুক্তরাজ্যের হালনাগাদকৃত ভ্রমণ তালিকায় আগামী ৮ আগস্ট থেকে বাদামিতে অন্তর্ভুক্ত হবে ভারত।
এছাড়া সবুজ থেকে বাদামি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন দেশগুলো চিহ্নিত করতে ব্রিটেনের সরকার একটি সবুজ পর্যবেক্ষণ তালিকা তৈরি করেছে। গত ১৭ মে থেকে এই ট্রাফিক লাইট সিস্টেম কার্যকর করেছে ব্রিটেন।
সেই সময় ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, লাল তালিকাভুক্ত চার দেশ থেকে বিমানের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়নি। এসব দেশ থেকে ব্রিটিশ, আইরিশ এবং যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের বাণিজ্যিক রুট ব্যবহার করে ব্রিটেনে ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়, ‘শুধুমাত্র ব্রিটিশ এবং আইরিশ নাগরিক অথবা যুক্তরাজ্যে যাদের বসবাসের অধিকার রয়েছে (দীর্ঘমেয়াদী ভিসাধারীসহ); তারা ব্রিটেনে প্রবেশের অনুমতি পাবেন এবং তাদের বাধ্যতামূলক সরকার-অনুমোদিত কোয়ারেন্টাইন স্থাপনায় ১০দিন কাটাতে হবে। এছাড়া তাদের একটি নির্ধারিত বন্দরে পৌঁছাতে হবে।’
লাল তালিকায় যে ৫৯ দেশ
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, কেপ ভার্দে, চিলি, কলম্বিয়া, কঙ্গো (গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র), কোস্টারিকা, কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, মিসর, ইরিত্রিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, ইথিওপিয়া, ফ্রেঞ্চ গায়ানা, গায়ানা, হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, লেসোথো, মালাউই, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, নামিবিয়া, নেপাল, ওমান, পাকিস্তান, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ভারত, ফিলিপাইন, কাতার, রুয়ান্ডা, সিশেলস, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, সুরিনাম, তানজানিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।
উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অথবা লাল তালিকাভুক্ত দেশ ভ্রমণ শেষে কোনও ব্রিটিশ নাগরিক যুক্তরাজ্যে ফিরলে তাকে অবশ্যই হোটেল কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে বলে সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের পরিবহন মন্ত্রণালয়।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস বলেছেন, একেবারে কঠিন পরিস্থিতি ছাড়া কোনোভাবেই লাল তালিকাভুক্ত দেশে ভ্রমণ করা যাবে না।
করোনার উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ৩০টি দেশ ও ভূখণ্ডকে লাল তালিকাভুক্ত করে ব্রিটেন। পরবর্তীতে এই তালিকায় আরও কিছু দেশ যুক্ত হয়। বর্তমানে লাল তালিকায় ঠাঁই পাওয়া দেশের সংখ্যা ৬০-এ পৌঁছেছে। সর্বশেষ জর্জিয়া, মেক্সিকো, লা রিইউনিয়ন এবং মায়োত্তে এই তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
ব্যতিক্রম ছাড়া লাল তালিকাভুক্ত দেশ অথবা ভূখণ্ড থেকে কেউ ব্রিটেন ভ্রমণ করলে তাকে অবশ্যই ১০ দিনের হোটেল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এছাড়া ব্রিটেনে ভ্রমণের আগ মুহূর্তে করানো কোভিড-১৯ পরীক্ষার সার্টিফিকেটও দেখাতে হবে। দেশটিতে পৌঁছানোর পর আট দিনের ব্যবধানে প্রথম এবং দ্বিতীয়বার অবশ্যই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে।
যে কারণে লাল তালিকায় বাংলাদেশ
করোনাভাইরাসের উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা শনাক্ত হওয়ায় এবং মহামারির প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটেনের ভ্রমণের লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।
গত ৯ এপ্রিল গ্লোবাল ট্রাভেল টাস্কফোর্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনও দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনার মূল মাপকাঠি হলো সেই দেশে করোনার সংক্রমণের হার, উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এবং টিকাদান কার্যক্রমের অগ্রগতি। এছাড়া এতে মহামারিবিষয়ক তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জিনোম সিকোয়েন্সিং সক্ষমতাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গত প্রায় ৫ সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ রয়েছে। অন্যদিকে, টিকাদানের হার বৃদ্ধির পরও করোনায় দৈনিক মৃত্যুও ২০০ জনের ওপরে আছে। এসবই ভ্রমণকারী এবং পর্যটকদের জন্য কোভিড পজিটিভ হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা নির্দেশ করে; যে কারণে দেশটি লাল তালিকায় স্থান পেয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)