জুনে আরো এক দফা বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম
এ বছরের জুনে আরও এক দফা বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ভর্তুকি কমানোর শর্ত পূরণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, আইএমএফ’র ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে জুনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। যা কার্যকর হলে মাত্র ৫ মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়বে।
চলতি সপ্তাহে ঋণ চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ঢাকা সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক সূত্রে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। এর বিপরীতে ঋণ শর্ত অনুযায়ী এ বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্যেই অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলেও প্রতিনিধি দলকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চে গড় মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৩৩ শতাংশ হয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে বিদু্যতের দাম আবার বাড়ানো হলে, দেশের অর্থনীতি বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। যা স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩ দফায় বিদু্যতের দাম বৃদ্ধি ও গ্যাসে ভর্তুকি শূন্য করায় মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে দেশের মানুষের জীবন যাপনের ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানের পরও খাদ্য পণ্যের নূ্যনতম ব্যয় মেটাতে পারছে না অনেকেই। এর ফলে হুমকির মুখে পড়বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্যান্য মৌলিক চাহিদা। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পুষ্টি চাহিদা হুমকির মধ্যে পড়বে। যা পরোক্ষভাবে উৎপাদনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
অর্থনীতিবিদ ডক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়লে পরিস্থিতি কি হবে বলা যাচ্ছে না। তবে ঋণ পেতে হলে সরকারকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেবল বিদু্যতই একমাত্র প্রভাবক নয়। আরও অনেক মৌলিক বিষয় রয়েছে যা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে। প্রথমত সরকারি সকল সেবার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু জ্বালানির দামের সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় জড়িত তাই পণ্যের দাম বাড়ানো ও নির্ধারিত দামে ভোক্তার পণ্য কিংবা সেবা গ্রহণের নিশ্চিয়তা দেওয়া গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
বর্ধিত মূল্যস্ফীতি সবার জন্য সমস্যা নয়, উলেস্নখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মূলত স্বল্প ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব পড়ে। তাই সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ব্যয় করা হয় তা যথাযথভাবে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়াও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও খাদ্যসহ কর্মসংস্থানে যে সব সরকারি বেসরকারি প্রকল্প চালু আছে তা তদারকি করতে হবে। বিশেষ করে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে মূল্যস্ফীতির চাপ অনেকটাই সামাল দেওয়া যেতে পারে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জনিয়েছেন, ভর্তুকি কমাতে জুনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ বাড়ানো হবে তা বৈঠকে নিশ্চিত করা হয়নি। ভবিষৎতে দাম আরও বাড়বে কিনা তা আন্তর্জাতিক বাজারে উপর নির্ভর করবে বলেও জানান তারা।
যদিও এ বছেরের শুরু থেকেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত বছরের শেষ দিকের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে স্পট মার্কেটে গ্যাস ও অপরিশোধিত জ্বালানির দাম। গত বছর দেশে জ্বালানি তেলে রেকর্ড দাম বৃদ্ধির কয়েক মাস পরই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমতে শুরু করে। এমনকি বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে জ্বালানি তেলে ব্যাপক মুনাফা করছে সরকার। ডিজেলের লিটারে ২৯ টাকা পর্যন্ত মুনাফা পেয়েছে পেট্রোবাংলা। কিন্তু দেশের বাজারে দাম কামানো হয়নি। এর কারণ হিসেবে বিশ্ববাজারে দাম ওঠা-নামার অনিশ্চয়তার কথা বলা হয়। কিন্তু দেখা গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৫ মাসে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটাই স্থির রয়েছে।
যেহেতু সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের শর্ত রয়েছে তাই এ সময়ের মধ্যে জ্বালানির দাম নতুন করে না বাড়লে দেশে বিদু্যতের দাম বাড়নোর প্রয়োজন না ও হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সার কিংবা কয়লার দাম বাড়লেও ভর্তুকি বাড়ানো যাবে না এবং জিডিপির অনুপাতে ভর্তুকির সর্বোচ্চ যে হার আইএমএফ নির্ধারণ করে দিয়েছে তার বেশি দেওয়া যাবে না বলে ঋণ চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ বছর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন দুই-ই বেড়েছে। তবুও গত ৪ মাসে তিন দফায় মোট ১৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধিতে সরকারের এ বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আর যদি জুনে একইভাবে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয় তাহলে সাশ্রয় হবে আরও ৪ হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুত বিভাগের তথ্যানুযায়ী গত অর্থবছর বিদ্যুতখানে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে তা ১৭ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও ডলারের দামের কারণে বিদ্যুত খাতে অতিরিক্ত ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দাবি করে বিদ্যুত বিভাগ।
তাই আইএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ এবং আগামী অর্থবছরে কোন খাতে কি পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও এখন থেকে ঋণ শর্ত অনুযায়ী প্রতি প্রান্তিকের জিডিপির তথ্য প্রকাশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো কাজ করছে বলে আইএমএফ এর প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে।
এছাড়াও আইএমএফ আগামী ডিসেম্বরে মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের জ্বালানির দাম সমন্বয় কার্যকরের যে শর্তারোপ করেছে, তা সেপ্টেম্বর মাস থেকেই কার্যকর করা হবে বলে বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন অর্থ সচিব।
সূত্র: যায়যায়দিন
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)