টাকা ব্যাপার না, ডিসেম্বরেই টিকা চাই
করোনার টিকা আগেভাগে পেতে অনেক দেশ আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন গতকাল বুধবার টিকা পেতে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা পেতে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার ও বায়ো এন টেকের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুত টিকা তৈরির উদ্যোগ হিসেবে হোয়াইট হাউসের গৃহীত ‘র্যাপ স্পিড প্রজেক্ট’ কর্মসূচির অধীনে ফাইজারের টিকা পেতে চুক্তি করা হয়েছে। এতে টিকা তৈরি ও বিপণনের কাজ আরও দ্রুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি টিকার ওপর বিনিয়োগ করেছে, যাতে টিকা উৎপাদন ও উদ্ভাবনের সক্ষমতা বাড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মতোই টিকা পেতে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপ। জার্মানি ইতিমধ্যে দেশটির কিউরভ্যাক নামের প্রতিষ্ঠানের ২৩ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রে টেনে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া ইউরোপের পক্ষ থেকে টিকা গবেষণায় ৮০০ কোটি ডলার খরচ করার ঘোষণা এসেছে।
চীনের পক্ষ থেকে টিকাকে সামরিক প্রচেষ্টার দিকে নেওয়া হয়েছে। দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস ইতিমধ্যে দেশটির শীর্ষ টিকা প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুত করেছে। এ ছাড়া চীনের সিনোফার্ম গ্রুপ তাদের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু করেছে।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’ বলছে, এ পর্যন্ত কোনো টিকা অনুমোদন পায়নি। ফাইজারের টিকা কার্যকর হবে কি না, তাও প্রমাণ হয়নি। তবু যুক্তরাষ্ট্র ফাইজারের সঙ্গে চুক্তি করে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে চাইছে। ফাইজার কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকা কার্যকর প্রমাণ হলেই ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা তারা উৎপাদন করে ফেলবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ফাইজারের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ২০ মার্কিন ডলার। তারা টিকার প্রথম ব্যাচের ডোজগুলো পাবে। তবে মার্কিন নাগরিকেরা এ টিকা বিনা মূল্যেই পাবেন। তবে টিকার অনুমোদন পেতে হবে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত হচ্ছে, টিকা কেবল নিরাপদ হলেই এবং ১০ কোটি ডোজ বুঝে পেলেই তবে অর্থ পরিশোধ করবে তারা।
ফাইজারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টিকা নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণে বড় আকারের পরীক্ষা চলতি মাসেই শুরু হয়ে গেছে। অক্টোবর নাগাদ এর ফল পর্যালোচনা করবেন নিয়ন্ত্রকেরা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়।
সোমবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ফাইজার ও বায়ো এন টেক তাদের টিকার প্রাথমিক পর্যায়ের ফল ঘোষণা করে। তারা দাবি করে, তাদের টিকা পরীক্ষায় রোগীর দেহে নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে উচ্চমাত্রার টি-সেল প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছে ফাইজারের টিকা।
এর আগে ১ জুলাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফল পাওয়ার কথা জানায় ফাইজার। তারা দাবি করেছে, এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এটি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করেছে। এ অ্যান্টিবডির মধ্যে কিছু নিউট্রিলাইজিং বা ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে কার্যকর অ্যান্টিবডি রয়েছে। কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির শরীরে যে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, এর চেয়ে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ গুণ বেশি। তবে এটি বেশি মাত্রায় দেওয়া হলে জ্বরসহ অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সফল ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। টাইম অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন, আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ তাঁদের ভ্যাকসিনের জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়ে যাবেন। সেপ্টেম্বরে তাঁরা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ফল জেনে যাবেন।
ফাইজার মূলত ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করে টিকা তৈরি করছে। এটি মেসেঞ্জার আরএনএ নামে পরিচিত। এ টিকা রোগীকে অসুস্থ না করে প্রতিরোধী সক্ষমতা গড়ে তোলে। এ পদ্ধতিতে দ্রুত টিকা উৎপাদন করা যায়। তবে এর আগে এ পদ্ধতিতে কোনো টিকা অনুমোদন পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না এর আগে টিকা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছ থেকে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার সাহায্য পেয়েছে। তারাও মেসেঞ্জার আরএনএ ব্যবহার করছে।
বিশ্বজুড়ে ১৫০টির বেশি টিকা তৈরি ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বর্তমানে ২৩টি টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে।
সুত্র প্রথম আলো
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)