বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সাতক্ষীরায় কাজী, পুরোহিত, ইমাম ও শিক্ষকদের সাথে প্রশাসনের মতবিনিময়
কোভিড-১৯ এর কারণে বাল্যবিবাহের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ডিজিটাল কর্নারে বৃহস্পতিবার সকালে কাজী, পুরোহিত, ইমাম ও শিক্ষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় বাল্যবিবাহে প্রতিরোধে প্রতিবন্ধকতা কী এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এছাড়া বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর সহায়তায় সাতক্ষীরা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে এবং উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা।
অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা জোহরা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জয়ব্রত ঘোষ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহিদুর রহমান, শিক্ষক এসএম শহীদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন ইউডিএফ দেবু বিশ্বাস।
বাল্য বিবাহের অশুভ পরিণাম ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বক্তারা বলেন, বাল্য বিবাহ একটি দেশের জন্য অভিশাপ। বাংলাদেশের আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারন করা আছে ১৮ বছর এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর। এর কম বয়সী ছেলে মেয়েদের বিয়ে হলে সেটি হয় বাল্য বিয়ে, যা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আইনের বিধি নিষেধ থাকলেও বাল্য বিয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় নিয়মিতই। বাল্য বিয়ে দেশের উন্নয়নে একটি বড় বাধা। যদিও বাল্য বিয়ে রোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। তা স্বত্ত্বেও বাল্য বিবাহের কুফল ও এর প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, এক সময় দেশে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ঘরে ঘরে বাল্য বিবাহ প্রচলিত ছিল । কিন্তু এখন শিক্ষিত ও উন্নত সমাজে কেউ বাল্য বিবাহের কথা ভাবতেও পারেন না। বাল্য বিবাহের প্রধান শিকার এখন মেয়েরা। এই কুপ্রথা প্রতিরোধ করতে হলে আইনের প্রয়োগ যেমন দরকার তেমনি প্রয়োজন সচেতনতা। মিডিয়া এই সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করতে পারে। তবে সমাজে ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব খুব বেশি। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত ও গির্জার পাদ্রীকেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
এই বাল্যবিবাহের মূলে রয়েছে সুপাত্র প্রাপ্তি, দরিদ্রতা এবং যৌন হয়রানির ভয়। বাল্য বিয়ে নারীর অনিরাপদ মাতৃত্ব ঝুঁকি বাড়ায়। বাল্য বিয়ের কারণে অকাল গর্ভপাত হওয়ার ফলে মা ও সন্তান অপুষ্টিতে ভুগে।
বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। মেয়েদের নিরাপদ পথচলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা পতিষ্ঠান, কর্মস্থল, রাস্তাঘাট গণপরিবহনে নারীবান্ধব ও যৌন হয়রানিমুক্ত সামাজিক নিরাপত্তার বিধান নিশ্চত করতে হবে। কোথাও বাল্য বিয়ে ও যৌতুক নারী নির্য়াতন হলে সরকারি আইনি সহায়তা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)