রেজিষ্ট্রেশন ফির বিলম্ব জরিমানায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ঝড়
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(যবিপ্রবি) অনার্স কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি’র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিলম্ব জরিমানা নিয়ে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,রমজান মাসে একই সময়ে একাধিক একাডেমিক ফি এর নোটিশ ও সময়সীমায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাঁরা।এদিকে সেমিস্টার ফি প্রদানের সময়সীমা ২ সপ্তাহ বৃদ্ধি করেছে যবিপ্রবি প্রশাসন।
বুধবার(২৯ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সেমিস্টার ফি প্রদানের সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে গত শনিবার(২৫ মার্চ) যবিপ্রবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ আমিনুল হক স্বাক্ষরিত অনার্স বিভিন্ন বর্ষের কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,আগামী ৪ এপ্রিল ২০২৩ এর মধ্যে অনলাইনে কোর্স রেজিষ্ট্রেশন করে, অগ্রণী ব্যাংক লি: এর যবিপ্রবি শাখার হিসাব নং এ রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ নির্ধারিত ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা জমা দিয়ে জমা রশিদসহ কোর্স রেজিস্ট্রেশন ফরমটি স্ব স্ব বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য বলা হলো।উক্ত তারিখের পর নিম্নে বর্ণিত হারে বিলম্ব ফি প্রদান সাপেক্ষে কোর্স রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা যাবে। একাডেমিক অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিলম্ব ফি :- ০৩ কার্য দিবস পর্যন্ত ২০০/- টাকা,০৪-১০ দিন পর্যন্ত ৫০০/- টাকা,১১-২০ দিন পর্যন্ত ২০০০/- টাকা।
এই বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে নানা বিস্ফোরক মন্তব্য ও প্রতিবাদ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন,জরিমানা নয়!মনে হচ্ছে, যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ঈদ না করার হুমকি দিল প্রশাসন।শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে এই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে চরম আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।
আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী একটি পোস্টের কমেন্টে লেখেন, আমি রক্তচোষা দেখেনি তবে নাম শুনেছি, তিন মাসের মধ্যে যবিপ্রবিকে দেখলাম। বাপের যা কিছু আছে তাই বিক্রি করে যবিপ্রবিকে দিয়ে দেও। মগের মুল্লুক।
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মীর ইবরার আলী প্রত্যয় ‘যবিপ্রবি পরিবার’ নামক ফেসবুকে গ্রুপে তার একটি স্ট্যাটাসে বলেন, ৫-ই মার্চ ২০২৩ থেকে ২৫-ই মার্চ ২০২৩ ইং পর্যন্ত মাত্র ২১ দিনের নোটিশ অনুযায়ী:-সেমিষ্টার ফি:- ৩৩৪০ টাকা, বিভাগ উন্নয়ন ফি:- ৩০০ টাকা, ক্লাব সাবস্ক্রিপশন ফি:- ২০০ টাকা এবং অনলাইন কোর্স রেজিস্ট্রেশন ফি:- ৫০০ টাকা। মোট ৪৪৪০ টাকা (বছরে ২ বার) ইহা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র। বিষয়টি অতীতের জমিদার-মহাজন প্রথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেকালে যেমনি চড়া সুদে ঋণ পরিশোধ করতে হতো বিষয়টি তেমনই। অপরদিকে যবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, যারা উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ড বৃত্তি পেয়েছে, তাদের প্রাপ্য টাকা প্রদান করার ক্ষেত্রে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের, যা খুবই হৃদয়বিদারক। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন পাচ্ছে না..? সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানে জানতাম, সেখানে কম খরচে উন্নত মানের লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ৬ টাকা বেতন দিয়ে সরকারি স্কুলে পড়ারও অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমানের পরিস্থিতি দেখে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতর পার্থক্য খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদ, এবং বাজারে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি, সেখানে এই অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই ফি প্রদান করা কতটুকু আরামদায়ক, সেটা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরাই জানে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন,১১ দিন বিলম্বের জরিমানার হার যদি ৪০০% হয়, তাহলে বৃত্তির টাকা প্রদানের এই বছর বছর বিলম্বের জরিমানার হার কত হওয়া উচিত…?এছাড়া, লিফটের সমস্যা, ক্যাফেটেরিয়ার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি অব্যবস্থাপনা তো রয়েছেই।শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে এসব ফি এর পরিমাণ কমানো উচিত, কারণ শিক্ষার্থীরা টাকার মেশিন না। যবিপ্রবি আমাদের ভালোবাসার বিশ্ববিদ্যালয়।তাই, আমরা যবিপ্রবি কে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা করতেই পারি।
এছাড়া একাধিক শিক্ষার্থীকে লিখতে দেখা যায় , ৩ কার্যদিবসের মধ্যে লিফট না লাগাইলে জরিমানা চাইতে পারা যাবে? ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ক্যাফেটেরিয়ার বাথরুম পরিষ্কার না হইলে জরিমানা কে দিবে? ৭ কার্যদিবসের মধ্যে টি এস সি তে রুম না দিলে জরিমানা কে দিবে? ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য অধিকার গুলো না পেলে জরিমানা গুলো কি দেবে? কার্যদিবসের জরিমানা শুধু শিক্ষার্থীরাই দেবে? অন্যায় ভুল শুধু আমরাই করি।
এভাবেই যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা তাদের ফেসবুক টাইমলাইনে বিভিন্ন ফি’র কথা উল্লেখ করে স্টেটাস দিতে থাকে। যবিপ্রবি নামযুক্ত ফেসবুক গ্রুপ থেকেও যবিপ্রবি প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখালেখি করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
যবিপ্রবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ আমিনুল হক বলেন, রেজিষ্ট্রেশন ফি এর বিলম্ব জরিমানার পরিমাণের বিষয়টি আমাদের কিছুই করার নেই।কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী নির্ধারিত।
এবিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আলম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখছি। আমি যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলবো যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপারটা বোঝা না হয়ে ওঠে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)