শেখ হাসিনার জীবনটাই সংগ্রামের: তথ্যমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখনও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই প্রতিনিয়ত কাটাতে হচ্ছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
‘রক্তাক্ত ও কণ্টকাকীর্ণ পথ যাকে দমাতে পারেনি, তিনি শেখ হাসিনা’।
তিনি বলছেন, শেখ হাসিনাকে ‘দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার এখনও ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে, এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা শাবান মাহমুদের লেখা ‘শেখ হাসিনার জীবনকথা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
সচিবালয়ে রোববার এ অনুষ্ঠানে হাছান বলেন, “শেখ হাসিনার জন্মের সময় পিতা (কাছে) ছিলেন না। বেড়ে ওঠার সময় পিতা বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত ছিলেন। পিতাতো বেশিরভাগ সময় জেলখানাতে থাকতেন। বিয়ের সময়ও বাবা জেলখানায়।
“তার পুরো জীবনটা সংগ্রামের জীবন, আজো তিনি সংগ্রামের মধ্যেই। অনেকে মনে করেন তিনি প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কোনো ব্যক্তিগত জীবন নেই। সারাক্ষণ দেশ, দল এগুলো নিয়ে ভাবতে হয়, কাজ করতে হয় এবং সারাক্ষণ নানা সমস্যা সামাল দিতে হয়। এখনও তিনি সংগ্রামের মধ্যে প্রতিনিয়ত।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়।
১৯৬৮ সালে বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি এক ছেলে (সজীব আহমেদ ওয়াজেদ) ও এক মেয়ের (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) জননী।
ষাটের দশকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ই শেখ হাসিনা তার মা, বোন ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় বন্দি ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে। স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়ার জার্মানির কর্মসূত্রে বিদেশে থাকায় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।
এরপর দীর্ঘ সময় দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাসিনার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চার মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সে কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, আগামী ফেব্রয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে তার ৪০ বছর পূর্ণ হবে।
“প্রায় ৪০ বছরের পথচলায় আমরা কে, কতটুকু শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকতে পেরেছি জানি না। কিন্তু শেখ হাসিনা ঝড়, বৃষ্টি, আঁধার রাতে সমস্ত ঝঞ্জা, সঙ্কটে, সংগ্রামে বাঙালি জাতির পাশে ও সাথে থেকেছেন।
“তাকে (শেখ হাসিনা) ১৯ বার হত্যা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তিনি বার বার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে এসে কখনো বিচলিত ও দ্বিধান্বিত হননি; আরও প্রত্যয়ী হয়ে বাংলাদেশে মানুষের সংগ্রামের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।”
হাছান বলেন, “আজকে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এখন কিন্তু গ্রামে শহরের অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। গ্রামের ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে পার্থক্য যদি ১০ বছর আগে দেখা যেত এখন সেটি আর বোঝা যায় না।
“গ্রামে এখন আর কুড়ে ঘর নেই, বাংলাদেশে এখন আর খালি পায়ে মানুষ দেখা যায় না, ছেড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না। আকাশ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর চেনা যায় না। ১০-১২ বছর আগে যে বিদেশে গেছে, সে এসে দেশ, শহর, গ্রাম চিনতে পারে না, এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, এখানেই শেখ হাসিনার সাফল্য।”
কিন্তু শেখ হাসিনাকে ঘিরে ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই’ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতিপক্ষ, দেশের প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে।
“সেজন্যই মধ্যপ্রাচ্যে গোপন বৈঠক হয়, সেখানে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকে। সেজন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের বৈঠক হয়, ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”
দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র নিয়ে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান।
তিনি বলেন, “এ অগ্রগতির চাকাকে যারা দুর্নীতি আর দুঃশাসনের মাধ্যমে ঘূর্ণায়মান চাকাতে পরিণত করেছিল, তারা এখনও আবার ষযড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের এ অগ্রগতিকে থমকে দিতে যায়।
“সেজন্য ষড়যন্ত্র থেমে নেই। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে, আজকেও দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার নানা ষড়যন্ত্র আছে, এগুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।”
শাবান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনার শৈশব থেকে সংগ্রামী জীবন, বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়কার তার রাজনৈতিক জীবন তার বইয়ে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)