বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ২৯ জন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে দুজন, মাগুরায় পাঁচ জন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে তিনজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, বরিশালে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় একজন, জয়পুরহাটে একজন ও ফেনীতে সাতজন নিহত হয়েছেন।
ফেনীতে ৭ জন নিহত
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সকাল থেকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্ট কালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ জানা গেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৭ জন মারা গেছেন। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রায় ৬০ জনের মতো আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন জেনারেল হাসপাতালে। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোববার (০৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাব্বী নিহতের বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রংপুর : রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।
পাবনা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতাল সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে শহরের সব রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় শহরের এসএস রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, যুবদল নেতা রন্জু (৪০), ছাত্রদল নেতা সুমন (৩০) ও যুবদল কর্মী আব্দুল লতিব (৪২)।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটলে পুরো শহর দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্র ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসা, আওয়ামী নেতা বিমল কুমার দাসের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ছাড়া জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসির সিরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমরা তিনজন নিহতের খবর শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনি।
বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।
ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।
বগুড়া : বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
রোববার (০৪ আগস্ট) বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
এদিকে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পরে পুরো শহর।
জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল থেকে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে থাকা সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা চৌধুরী, মীর মোয়াজ্জেম, মাহমুদ হোসেন হিমু, অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সৌজন্যে: যুগান্তর, কালবেলা
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]