আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন শুক্রবার
সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সব চড়াই-উৎরাই পার করে শুক্রবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পালন করতে যাচ্ছে দলের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এ দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং গণমানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম।
প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দলটির নেতৃত্বেই এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজগার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক।
১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির একচ্ছত্র নেতা। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা।
’৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সূচিত হয়, সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ এবং এই আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শুন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলের মধ্যে ভাঙনও দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়।
চার দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে দলটি।
আবার ৭৪ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা সুসংহত হতে সক্ষম হয়ে জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি। কিন্তু এই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবারো নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতারা গ্রেফতার হন। একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম।
তবে, সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হন।
নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছে দলটি।
এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন। এবার সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট এ চারটি মূল ভিত্তিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে।
সূত্র: বাসস
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)