বহুল আকাঙ্ক্ষিত আখাউড়া-আগরতলা ডাবললাইন (ডুয়েলগেজ) রেলপথে পরীক্ষামূলক বা ট্রায়াল রান ট্রেন চালানো হয়েছে। ৪০ কিলোমিটার গতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আখাউড়া রেল সেকশনের গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আগরতলা নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত স্টেশন (বাংলাদেশ অংশ) শিবনগর শূন্যরেখা পর্যন্ত চালানো হয় একটি কন্টেইনার ট্রেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হলুদ রঙের ৪টি খালি বগি নিয়ে লোকোমোটিভ গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে কন্টেইনার ট্রেনটি। এ পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফল হওয়ায় শিগগিরই রেলপথটির উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের সীমান্তবর্তী শিবনগর পর্যন্ত ১৮ মিনিটের যাত্রা সফলভাবেই সম্পন্ন করে ট্রেনটি। ঘণ্টায় গতিবেগ ছিল ৪০ কিলোমিটার। মূলত রেলপথে একাধিক বাঁক থাকায় কচ্ছপগতিতে ট্রেন চালানো হয়।
প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক রুটের ট্রেন চালাতে পেরে উচ্ছ্বসিত লোকোমাস্টার সাজু কুমার দাস। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালাই। যাত্রাপথে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ দেখতাম। সেই রেলপথে প্রথমবারের মতো ট্রেন চালানোর দায়িত্ব পেয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত। এটি আমার কাছে অনেকটাই স্বপ্নের মতো। দিনটি স্মৃতি হয়ে থাকবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলপথের বাংলাদেশ অংশ ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। করোনা মহামারিসহ নানা সংকটে দেড় বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে পাঁচ বছরেরও বেশি।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কান্ট্রি হেড শরৎ শর্মা বলেন, প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ শেষ। এখন কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনের ফিনিশিং কাজ চলছে। তবে উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছে রেলপথ।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের বাংলাদেশ অংশের প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিয়া জানান, খুব ভালো লাগছে এ রেলপথে সফলভাবেই ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। এখন উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত আছে রেলপথটি। তবে কবেনাগাদ উদ্বোধন করা হবে সেই দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পটি আখাউড়া-ঢাকা হয়ে আগরতলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দেবে। প্রকল্পটি চালু হলে ৩১ ঘণ্টার পরিবর্তে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা এবং আগরতলা-কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র ৫১৩ কিলোমিটার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে রেলপথে বাণিজ্যের দ্বার খুলবে, কমবে পরিবহণ খরচ- হবে পর্যটন ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান এমনটাই দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]