গত ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় দাদা মোহাম্মদ তোজাম্মলের সঙ্গে তাঁর চা–দোকানে ছিল দুই বছর তিন মাস বয়সী শিশু তানিয়া। দোকানের সামনে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লাগে তানিয়ার চোখে। গুলিতে বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে শিশুটি। ওই চোখ দিয়ে সে এখন শুধু এক ফুটের মধ্যে হাতের নড়াচড়া বুঝতে পারে।
সম্প্রতি তানিয়ার দাদা চা-দোকানি মোহাম্মদ তোজাম্মল সংবাদমাধ্যমে জানান, চোখে গুলি লাগার পর অনেক জায়গায় গিয়ে চিকিৎসা করিয়েও তানিয়ার বাঁ চোখের দৃষ্টি ফেরানো যায়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তোজাম্মল বলেন, সেদিন দুপুরে তানিয়া আমার দোকানের সামনে বসে ছিল। পুলিশ প্লাজার দিক থেকে কয়েকটি গাড়িতে করে সেখানে আসে একদল পুলিশ। দোকানের সামনে দিয়েই গাড়িগুলো যায়। পেছনের গাড়িটি আমার দোকান থেকে ২০-২৫ হাত দূরে যাওয়ার পরে হঠাৎ গুলি করতে শুরু করে। হঠাৎ দেখি আমার নাতির চোখ থেকে রক্ত পড়ছে, তার কপালটাও ফুলে গেছে। সেখানে ওই সময় কোনো আন্দোলনকারী ও বিক্ষোভ চলছিল না বলেও জানান তিনি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ছোঁড়া ছররা গুলিতে ৪০১ জনের চোখ নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন দুই চোখেরই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এক চোখ নষ্ট হয়েছে ৩৮২ জনের। এ ছাড়া ২ জনের দুই চোখে ও ৪২ জনের এক চোখে গুরুতর দৃষ্টিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৭ জুলাই থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত চোখে আঘাত নিয়ে ৮৫৬ জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে ৭১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। চোখে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ৫২০ জনের। তাদের মধ্যে ৫৫৮ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী।
হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, চোখে গুলি বা আঘাত নিয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের ১৫৯ জনই শিক্ষার্থী। এ ছাড়া চাকরিজীবী ৫৩ জন, শ্রমজীবী ৪৯ জন, ব্যবসায়ী ৩৫ জন, গাড়ি, রিকশা, ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ২৯ জন, দোকানদার ও দোকানকর্মী ১১ জন, গৃহিণী ৭ জন ও মেকানিক ৭ জন। এর বাইরে শিক্ষক ও পুলিশ দুজন করে চারজন এবং একজন চিকিৎসক। তবে ২২৪ জনের পেশা কী, তা জানা যায়নি।
আরও জানা গেছে, গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টি হারানোদের মধ্যে ছয়জন শিক্ষার্থী। বাকিদের মধ্যে শ্রমিক, গাড়িচালক ও চাকরিজীবী দুজন করে ছয়জন। একজন শিক্ষক। অন্য ছয়জনের পেশাগত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী ৬৩ জন। এর মধ্যে চারজনের বয়স ১০ বছরের কম বলেও জানিয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আর সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর)পর্যন্ত ওই হাসপাতালে মোট ৫৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অন্তত তিনজন এখনো দুই চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। এর বাইরে অনেকের এক চোখের অবস্থা খুবই খারাপ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]