এক যুগ আগেও অর্থকষ্টে দিন কাটত গাড়ি চালক আবেদ পরিবারের। হঠাৎই পালটে যায় সবকিছু। আবেদ বনে যান অঢেল সম্পদের মালিক। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বোতলা গ্রামে গড়ে তুলেন আলিশান বাড়ি।
এছাড়া ঢাকায় একাধিক বাড়িম ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে তার।
তিনি আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে প্রচারণাও চালান। তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক। আবেদকান্ডে অতিসম্প্রতি তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাবার অবৈধ টাকায় তারও রয়েছে রাজকীয় জীবন। দানদখিনা করে এলাকায় সিয়ামও এখন পরিচিত মুখ। তবে জনমনে প্রশ্ন ছিল বাপ-বেটার এই বিপুল অর্থকড়ির উৎস কোথায়।
সম্প্রতি পিএসসির প্রশ্নফাঁসচক্রের বিষয়টি সামনে আসে। ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওই চক্রের অন্যতম প্রধান সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন।
অভিযোগ উঠেছে, গাড়িচালক আবেদ আলী জীবন বছরের পর বছর পিএসসির প্রশ্নফাঁসের টাকায়ই গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। তার অঢেল সম্পদের তথ্য ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
আবেদ ফেসবুক পেজে একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেন নিজেই। গত ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’
বাবার মৃত্যুর পর অভারের সংসারে জীবিকার তাগিদে সৈয়দ আবেদ আলী গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে কুলির কাজ করেছিলেন। পরে ব্যাচেলর বাসায় পরিচয় হওয়া এক বন্ধুর মাধ্যমে পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে আবেদের ছোট ভাই সৈয়দ সাবেদ আলী এসব তথ্য জানান।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রহমান ও জয়গুন নেছা দম্পতির মেজো ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী। তারা তিন ভাই ও এক বোন। দুই ভাই কৃষি কাজ করেন।
এর আগে কৃষক বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আবেদ আলী মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় চলে যান।
এরপর সেখানে কুলির কাজ শুরু করেন। পরে এক ব্যক্তির বুদ্ধিতে গাড়ি চালানো শিখে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণির সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেন বেসরকারি একটি কোম্পান বেক্সিমকো’তে।
১৯৯৭ সালের দিকে রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার একটি ব্যাচেলর মেসে থাকতেন আবেদ আলী। ওই মেসেই আবেদ আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকার শাহিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। শাহিনের মামা মেজবাহ চাকরি করতেন সচিবালয়ে। শাহিনের মাধ্যমেই পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হয় তার।
সাবেদ আলী আরো বলেন, ১৯৯৭ সালের দিকে আমি মেরাদিয়াতে চানাচুর বিক্রি করতাম। আবেদ আলী থাকতো ইন্দিরা রোডে। সে বেকার ছিল। মাঝে মধ্যেই আমার থেকে মেসের খরচের জন্য ৩০০-৫০০ টাকা নিত। তবে শাহিন নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে পিএসসিতে চাকরি হওয়ার পর ওই বছরই সে বিয়ে করে। বিয়ের পরে সে আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। এখনও তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খান বলেন, আবেদ আলীরা পারিবারিকভাবে খুবই গরিব ছিল। তার পরিবার ১৯৮৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত চাল, গম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। আবেদ আলীর সঙ্গে তার অন্যান্য ভাইদের পারিবারিক সম্পর্ক নেই বলে আমি জানি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]