
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অনেকেই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য—জুলাই বিপ্লবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছিল না এটি শেয়ার করছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কিন্তু আমরা কি এটা আগে জানতাম না? আমাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ইতিহাস বোঝার জন্য কেন একজন গণহত্যাকারীর সত্যায়ন দরকার হবে?’
তার মতে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর জুলাই বিপ্লব ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণগুলোর একটি। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো ঘটনা বলা জনগণের শক্তি, ভূমিকা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করার শামিল।
শফিকুল আলম আরও বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যক্তিগত ট্রমার প্রভাব নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি জটিল পিটিএসডি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার)-এর এক উদাহরণ ছিলেন। তার টানা ১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় প্রতিটি বড় বক্তৃতার তৃতীয় বা চতুর্থ প্যারাতেই তিনি পরিবারের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলতেন। এটি তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে দীর্ঘ সময় প্রভাবিত করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনা প্রায়ই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের গল্প সামনে আনতেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি দাবি করেছিলেন, একটি মার্কিন কোম্পানিকে গ্যাস রপ্তানির অনুমতি না দেওয়ায় তিনি নির্বাচনে হেরেছেন। পরে সেন্ট মার্টিন নিয়ে আরেক দাবি করেন—যা নিয়ে পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো মার্কিন কর্মকর্তা কখনো মন্তব্য করেননি।
প্রেস সচিবের ভাষায়, শেখ হাসিনা অনেক সময় নিজেই নিজের তৈরি নানা বয়ানে আটকে পড়তেন। তবুও শেষ সময়ে তার চারপাশের কিছু সমর্থক—বিশেষ করে প্রো–আওয়ামী লীগ মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের একটি অংশ—তার প্রতি এক ধরনের আধ্যাত্মিক মর্যাদা আরোপ করেন। তাকে ‘জিন্দা পীর’ বলা হতো। শেষ সময়ে গণভবনে ‘কদম্বুসি’ যেন প্রকাশ্য ভালোবাসা-সম্মানের একটি রীতি হয়ে দাঁড়ায়।
শফিকুল আলম জানান, এখনো অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা বিদেশি সমর্থনে আবারও নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় ফিরবেন। আশ্চর্যের বিষয়, বহু শিক্ষিত, ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ের মানুষও এ বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের তিনি আখ্যা দেন ‘নীরব কদম্বুসিওয়ালা’ যারা প্রকাশ্যে আনুগত্য দেখাতে না পারলেও ব্যক্তিগতভাবে সুযোগ পেলে সেই রীতিই পালন করতে প্রস্তুত।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]