কুয়াশা মাখা শীতল বাতাসে আমার ঘরের জানালা ভেদ করে আমাকে ঠান্ডা করে দিচ্ছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল; শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে গিয়েছিল। সারারাত চোখের পানি ফেলেই কাটিয়েছি।
রুমার কাছে আমি ফিরতে চায়। কিন্তু ও তাতে না করে দিয়েছে। কোনোমতেই রুমার সাথে অন্য ছেলের সম্পর্ক মানতে পারছিনা। রুমার কথা ভেবেতো আমার সারারাত ঘুম হয়নি।
সকালে ১০টার সময় ঘুম থেকে উঠে মতিন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে দেখি রুমা মনের আনন্দে বই পড়তেছে। আমাকে দেখে একটু মনে হয় কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমার তাতে যায় আসে না। কারণ ও নিজের হাতে সম্পর্কটা নষ্ট করেছে। সম্পর্কটা থাকলে হয়তো ওর পাশে আমি বসতে পারতাম।
কেন জানি রুমাকে আজকে দেখতে অনেক মিষ্টি লাগছে। ফ্যানের বাতাসে তার কপালের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। রুমা যদি একবার ক্ষমা করতে পারতো আমার তাইলে আমাদের একটা সুন্দর সংসার হতো পরমুহুর্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি ভাবলা।
আমি হয়তো জীবনটা যত সহজ মনে করছি আসলে জীবন অত সহজ না। রুমা অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো তাই আমি রুমাকে না বলেই প্রাইভেটের ঐখান থেকে বেরিয়ে আসি। আসার সময় স্যারকে পেলাম না তাই এক বন্ধুকে বলে আসলাম।
বাড়িতে বসে দেখি আমার বড় বোন এসেছে। আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলো এতো দ্রুত বাড়ি আসলি যে। আমি আবার মিথ্যা কথা বলতে পারি না। তাই কিছু না বলে আমার ঘরে ঢুকে গেলাম।
আম্মু আমার ডাকছে ভাত খাইতে! আমি বললাম ভাত খাবো না। কিন্তু আম্মু একটু উচ্চস্বরে বললো চুপচাপ খেতে আয়। এদিকে আমার বোন বলছে সোনা ভাই আমার খেয়ে যা। সবার জোড়াজুড়ি আর অনুরোধে বাধ্য হয়ে খেতে বসতে হলো আমার। কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছেনা, দম বন্ধ লাগছে। শুধু কালরাতের কথাগুলোই ঘুরেফিরে মনে হচ্ছে। শুধু ভাবছি রুমা আমার সাথে কেন এমন করলো, খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করতে করতে ১১টা বেজে গেলো আমার।
যায় হোক আসল ঘটনাটা বলি! গতকাল রাতে রুমা আমার কাছে ফোন দিয়ে বলেছে অনেক কথা। সব কথা তো আর বলা যায় না। তবে আমি ছেলেটা ছিলাম একটু মেয়ে ভক্ত, মেয়েদের সাথেই সারাদিন কথা বলতাম। এই কথাটা রুমা আমার অনেকবার বলেছে যে তার পছন্দ না এটা। কিন্তু কে শোনে কার কথা, আমি সবার সাথেই কথা বলতাম। এই সব কারণে রুমা আমার ছেড়ে দিছে। আর বলছে আমার মুখ কখনো যাতে তার না দেখাই।
রুমা কয়দিন পরে কোথায় যেনো চলে গেলো। আমি কিছুই জানিনা। অনেক খুঁজিছি তাকে কিন্তু কখনো পায়নি। অনেকগুলো মাস কেটে যায়।আমি রুমা দুজনে সামনাসামনি আর দেখা হয়নি। বলতে গেলে রুমা ইচ্ছা করেই আমার সামনে আসিনি। তবুও যখন হঠাৎ হঠাৎ সেই রাতের কথা মনে হয়। যে রাতে রুমার আমার ছেড়ে গিয়েছিল। সেই দিন রুমা যদি সম্পর্কটা ভেঙে না দিতো তাইলো এখন হয়তো আমরা দুইজন পাশাপাশি বসে এক কাফ কফি নিয়ে দুইজন ভাগ করে খেতাম। রুমা যদি একটাবার আমার বুঝতো তাইলে জীবনটা অন্যরকম হয়ে যেত। আমার মনে হয় রুমা যা করেছে ঠিক করেছে। কারণ ওতো আর খেলার পুতুল ছিলো না।
আজকে তিন বছর পার হয়ে গেলো রুমা কখনো জানতে চাইনি আমি কেমন আছি। আমি মনে করি সেও ভালো আছে। নিজের জীবন গুছিয়ে নিক। আমার এখন আর কষ্ট হয় না আগের মতো। হয়তো কষ্টগুলো গভীর অভিমানের তলায় চাপা পরেছে; সুযোগ পেলেই বেরিয়ে আসবে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়েছি আমি। চাকরি পেয়ে গিয়েছি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। নেই কোনো পিছুটান আর ভাবনা। ভালো আছে সে। এক শহরে বসবাস করেও দীর্ঘ তিন বছর রুমা নামক মেয়েটির সাথে আমার আর দেখা হয়নি।
হঠাৎ এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যাতে আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। একটা গাড়ি এসে থামে আমার ঠিক সামনে। দরজা খুলে বেরিয়ে আসে একটা মিষ্টি মেয়ে। রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লম্বা লম্বা পা ফেলে মেয়েটি এগিয়ে আসে। আমি ভয় পেয়ে যায়। কিছু সময় পর বুঝতে পারি মেয়েটি রুমা; আমি দুই চোখ মেলিয়া তাকে দেখতে থাকি এই দেখা যেনো শেষ না হয়। কিছু সময় পরে গাড়ি থেকে রুমার স্বামী ডাক দিচ্ছে। এবং রুমা চলে গেল। এই যাওয়ার মধ্যদিয়ে আমার শেষ আশাটুকু ও শেষ হয়ে গেলো....!
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]