পদত্যাগ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসুন : এবি পার্টি


রাষ্ট্রের সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট ও জটিল পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের পদত্যাগ নয়, বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি।
শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে বিজয়নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশকে কেন্দ্র করে জাতির মধ্যে যে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, অনিশ্চয়তা ও জটিল পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাসেম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী) সাইয়েদ নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) গাজী নাসির এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান।
মঞ্জু বলেন, গত কয়েক মাস ধরে দেশে যে পরিস্থিতি ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের যে দূরত্ব দৃশ্যমান হচ্ছিল তাতে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা বলেছিলাম এটা বন্ধ না হলে ক্রমশ জটিলতা ও সংকট দেখা দেবে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। গত কয়েকদিনে বিএনপি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, ৬ জন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি, যমুনা অবরোধ করে গত কয়েকমাসের নানা দাবি-দাওয়া-আন্দোলন এবং সর্বশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু সংবাদপত্রে সেনা প্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসে দেওয়া বক্তব্যের প্রচার ব্যাপক ধূম্রজাল তৈরি করেছে। স্পষ্টত সরকারের সঙ্গে বিএনপি ও এনসিপির সম্পর্কের অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। সেনাপ্রধানের নামে প্রচারিত বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয়গত ঘাটতি রয়েছে।
এসব বিষয়কে অনাকাঙ্ক্ষিত আখ্যায়িত করে দলের চেয়ারম্যান মঞ্জু বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য সরকারের উপদেষ্টারা কোনো উদ্যোগ নেননি। কোনো কোনো উপদেষ্টার তৎপরতা ও কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সংহতি ও জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয়েছে। ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কিছু কিছু বিষয়ে অহেতুক বিবাদে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিএনপিসহ বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে একেকবার একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। বড় দুটি দল নিজেদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিভেদে লিপ্ত হয়ে প্রশাসনকে অকার্যকর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটিয়েছেন। এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান ছিল অস্পষ্ট ও দুর্বল। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় এবং সরকার অনির্দিষ্ট মেয়াদে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকতে চান এরকম সন্দেহ সংশয় কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রকটভাবে দেখা দিয়েছ। এসব বিষয়ে আমরা বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও বিবাদমান পক্ষগুলো বসে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সেনাবাহিনী প্রধানের সর্বশেষ বক্তব্য প্রসঙ্গে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ওনার বক্তব্যটা আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি। কোনো সরকারি তথ্যসূত্র বা সংস্থার অফিসিয়াল বক্তব্য আকারে পাইনি। বিস্তারিত বক্তব্যটা আইএসপিআর বা সরকারি তথ্যসূত্রের আলোকে এলে ভালো হতো। সেনাপ্রধান এর আগেও ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার, ইনক্লুসিভ ইলেকশন ও সংস্কার বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। আমরা যতটুকু জানি সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ ধরনের সরকার; যেখানে সেনাবাহিনী ও সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করছে। অতএব সরকার ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই। বৃহস্পতিবার তিনি (সেনাপ্রধান) করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ইস্যুসহ যেসব বিষয়ে কথা বলেছেন তাতে সরকারের মতের সঙ্গে তার দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়েছে। এটা জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছায় এবং জটিলতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। সরকারের উচিত সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা সমাধানের পথ বের করা।
তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আগ্রহ সংক্রান্ত যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তা নিয়ে দেশবাসী ভীষণরকম উদ্বিগ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য আমরা পাইনি। আমরা মনে করি দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সবারই নানা ভুল-ভ্রান্তি ও অস্বস্তিকর আচরণ আজকের জটিল পরিস্থিতির জন্য দায়ী। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ এর কোনো সমাধান নয় বরং তা ভয়াবহ অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে।
তিনি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক ঐকমত্যে পৌঁছানোর উদাত্ত আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নেতাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, আনোয়ার ফারুক, গণপরিবহন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মতিয়ার রহমানসহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা) শাজাহান ব্যাপারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
