তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সমবায় অফিসের এক সময়ের আলোচিত সহকারী পরিদর্শক অজয় কুমার ঘোষ বাবলু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর চলতি বছর জুলাইয়ে বদলি হলেও ফের নিজ উপজেলা তালায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়-ঝাঁপ ও তদ্বির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও খবর রয়েছে। এদিকে ফের তার তালায় ফেরার খবরে সমবায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে।
অভিযোগে জানানো হয়, অজয় ঘোষ বাবলুর বাড়ি তালার উপজেলার ঘোষনগর গ্রামে। পিতা অমল কৃষ্ণ ঘোষ প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা। দীর্ঘদিন তালা উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীণ তালার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ক্যাশিয়ার হিসেবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন তিনি।
সরকারি চাকুরে হলেও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি, মিছিল ও সভা-সমাবেশে অংশ নিতেন। জাতীয় ও স্থানীয় পরিষদের বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে “ভোট কাটার মাস্টার মাইন্ড”দের অন্যতম ছিলেন এই অজয় ঘোষ। এমনটা প্রচার রয়েছে এলাকাময়।
তার বিরুদ্ধে নিজ অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন অফিসে প্রভাব খাটিয়ে ঘুষ বাণিজ্য ছিল তার প্রধান কাজ। নিজ অফিসে ঘুষ না পেলে সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ তৈরির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, জমি দখল, বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে অলিখিত লক্ষ লক্ষ টাকা লগ্নি ব্যবসা, বিভিন্ন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে জলাকার বরাদ্দ পাইয়ে দিয়ে নিজ বে-নামে অংশ গ্রহন। উপজেলা পরিষদের সরকারি কোয়ার্টার অবৈধভাবে নিজ দখল রাখাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় সরকারী চাকুরে হয়েও সিনিয়র আওয়ামী নেতার ন্যায় প্রভাব খাটিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করেছিলেন তিনি। সরকার পতনের প্রায় এক বছর পর নিজ উপজেলা তালা থেকে বদলী হয়ে বাগেরহাট সদরে গেলেও ইতোমধ্যে ফের নিজ উপজেলায় ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এমনকি বদলীর খবরে বিভিন্ন সমবায়ীদের নাম ব্যাবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে বিবিৃতি প্রকাশ করে নিজের পক্ষে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আদায়ের অপচেষ্টা করেন। তবে এতে কোন কাজ না হলেও এখন প্রথমে পাইকগাছা ও সেখানে বদলী হতে পারলে পরে তালায় ফিরতে তদ্বির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
সূত্র দাবি করছে, অজয় ঘোষ তালায় অবস্থানকালীণ বিভিন্ন সময় নিজের লোকদের নামে বিভিন্ন খাল ইজারা দিয়ে নিজেই সেখানে মৎস্য চাষ করেন। পছন্দের বিভিন্ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে বেনামে লক্ষ লক্ষ টাকার সুদের ব্যাবসা পরিচালনা করেন। মৎস্য চাষীদের গুচ্ছ করে সমিতির নিবন্ধনের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি তালায় থাকা কালিন দুদ্ধ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের শুরুতে সরকারি বরাদ্দের ২ কোটি টাকা নিজের ইচ্ছা মত ব্যক্তি ও নিকটাত্বীয়দের মধ্যে ঋণ প্রদান করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্টের জুলাই বিপ্লব চলাকালে তালায় আওয়ামী লীগের পক্ষে লাঠি-সোটা মহড়ায় তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দেন। এ সংক্রান্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ঐ লিংকে মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকেই তাকে ‘আওয়ামী লীগের সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য’ আখ্যা দেন। অনেকেই তাকে ‘ভূমিদস্যু’ হিসেবেও চিহ্নিত করেন।
বিরুদ্ধে বিবিবভিন্ন সময় গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বরাবর তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন ফ্যাসিষ্ট ছায়াতলে নিরাপদে ছিলেন। আর এখনও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
বর্তমানে তিনি বাগেরহাট সদরে বদলি হলেও প্রায়শই তাকে তালা এলাকায় দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে তিনি সেখানেও ঠিকমত অফিস করছেননা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালা উপজেলা সমবায় অফিসের জনৈক কর্মকতা বলেন, তিনি বদলি হয়েও তালার অফিসে ঢুকে নানা বিষয়ে খবরদারি করেন। এসব নানা কারণে তাদের অফিস করাও দূরুহ হয়ে পড়েছে।
তালা উপজেলা নাগরিক কমিটি ও তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হাকিম জানান, তার মত দূনীতিবাজ কর্মকর্তা তিনি দ্বিতীয়টা দেখেননি। তিনি তার শাস্তি কামনা করেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]