হত্যা, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, ঘেরদখল, গরীবের ত্রান আত্মসাৎ,অগ্নিসংযোগসহ ১৫ মামলার আসামী সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার ও আগামী ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়াসহ তার গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, খাজরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল কুদ্দুস মোল্যা।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৮নং খাজরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের বাবা মৃত মোজাহার উদ্দিন একজন কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। সরকারি গেজেটভূক্ত আশাশুনি উপজেলার রাজাকারের তালিকায় ১২নং ক্রমিকে ও সংশোধিত তালিকায় ১৭৬ নং ক্রমিকে তার নাম তালিকা ভূক্ত রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মোজাহার উদ্দিন গদাইপুর গ্রামের নওশের আলী সরদারকে মেলেটারি ও রাজাকার ক্যম্পে তুলে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেন। এঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার পুত্র নাজিমুদ্দীন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি যুদ্ধাপরাধ আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া ডালিমের বড় ভাই আব্দুল আলিম জীবিত অবস্থায় দীর্ঘ ৫ বছর আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ছিলেন। তার অপর ভাই জুলফিকার জুলি বর্তমানে আশাশুনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও অপর ভাই আব্দুস সালাম বাচ্চু উপজেলা বিএনপির কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য। বিগত ১৪ বছর আগে শাহনেওয়াজ ডালিম তার আপন ফুফাত ভাই আশাশুনি উপজেলার চাপড়া গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাশেদ আহম্মেদ খোকার মৎস্য ঘেরের কর্মচারী ছিলেন। ডালিম আপদমস্তক বিএনপি পরিবারের লোক হয়েও প্রভাবশালী এক আওয়ামী নেতার হাত ধরে ২০০৮-২০০৯ সালে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক হিসাবে পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে আশাশুনি থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। ২০১৯ সালে গঠিত উপজেলা কমিটির আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে যান। তার পর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ডালিমকে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চাকরি তদ্বীর থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজী, ঘের দখল, ঘের মালিক ও সংখ্যালঘু ঘের মালিকদের হারীর টাকা আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে টি.আর./ জি.আর, কাবিখা, কাবিটা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন ভূয়া তালিকা দিয়ে টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে লক্ষ লক্ষ উত্তোলনের মাধ্যমেই অল্প দিনেই ফুলে ফেপে কোটিপতি বনে যান রাজাকারপুত্র ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম। খাজরা ইউনিয়নে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। জনৈক মুক্তির চিংড়ী ঘের লীজ নিয়ে ৩০ বিঘা জমির প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর হারির টাকা পরিশোধ না করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা জোর পূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। দীর্ঘ দিন আমার জমিও ভয়ভীতি দেখিয়ে লীজ নেওয়ার তথা বলে জোর পূর্বক সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখল করে দীর্ঘ দিন মাছ চাষ করে। ডালিমের দুই ভাই ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী গত ৯ এপ্রিল’২০২০ খ্রিঃ রাতে গদাইপুর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শরবত মোল্লা ও মঞ্জুরুল মোল্ল্যার চিংড়ী ঘেরে লুটপাট চালায়। পরদিন ১০ এপ্রিল সকালে চেয়ারম্যানের ভাই আহসান হাবিব টগর গদাইপুর মাছের সেটে লুটকৃত মাছ বিক্রি করতে গেলে শরবত মোল্লার সাথে বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম ও তার ভাই আহসান হাবিব টগরের নেতৃত্বে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী শরবত মোল্লাকে তার বাড়ীর পাশ্ববর্তী কবরস্থান এলাকায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আহত অবস্থায় খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ এপ্রিল তিনি মারা যান। এঘটনায় নিহতের ছেলের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী চেয়ারম্যান ডালিম তার ঢাকার খিলখেত এলাকার নিজস্ব ফ্লাট থেকে গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ দিন জেল খাটেন। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের বিরুদ্ধে হত্যা, টুম্বা ধর্ষণ, জমি দখল, ত্রাণের টাকা আত্মসাতসহ ১৫টি চার্জশীট ভূক্ত মামলা ও ৫টি জিডি রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ সময় দূর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের গ্রেফতারসহ অওয়ামীলীগের দলীয় পদ থেকে বহিস্কার এবং আগামি ইউপি নির্বাচনে যাতে তিনি নৌকা প্রতিকের দলীয় মনোনয় না পান সে জন্য প্রধান মন্ত্রী আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]