আহকামে সিয়াম ও কিয়াম
************************
আল্লাহর কত দয়া! ইসলামকে কত সহজ করেছেন| সাহরী খাওয়া আমাদের নিজেদের জন্যই প্রয়োজন, অথচ আল্লাহ এ কাজটিকে এবাদত বানিয়ে দিয়েছেন | খেলে আল্লাহ খুশি হন এবং সাওয়াব দেন | বিভিন্ন হাদীসে রাসূল (স.) সাহরী খেতে নির্দেশ দিয়েছেন | এক হাদীসে তিনি বলেন:
------------------------------------------------------------------------
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسٍ، ح . وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، عَنِ ابْنِ عُلَيَّةَ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ أَنَسٍ، رضى الله عنه ح . وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، وَعَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسٍ، - رضى الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السُّحُورِ بَرَكَةً " .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাহ্রী খাও, সাহ্রীতে বরকত,রয়েছে। (ই.ফা. ২৪১৬, ই.সে. ২৪১৫)
--------------------------------------------------------------------
" সাহরী খাওয়া বরকত, কাজেই তোমরা তা ছাড়বে না, যদি এক ঢোক পানি পান করে ও হয় তবুও,কারণ যারা সাহরী খায় তাদের জন্য আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সালাত (রহমত ও দু'আ) প্রদান করেন |"
আহমদ,আল-মুসনাদ ৩/১২, ৪৪-ইবনু হিব্বান, অাস-সহীহ ৮/২৪৫ |
--------------------------------------------------------------------------
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস |
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ، - رضى الله عنه - قَالَ تَسَحَّرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قُمْنَا إِلَى الصَّلاَةِ . قُلْتُ كَمْ كَانَ قَدْرُ مَا بَيْنَهُمَا قَالَ خَمْسِينَ آيَةً .
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাহ্রী খেয়ে সালাতে দাঁড়ালাম। [রাবী আনাস (রাঃ) বলেন] আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সাহ্রী ও আযানের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বলরেন, পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মতো সময়ের। (ই.ফা. ২৪১৯, ই.সে. ২৪১৮)
--------------------------------------------------------------------------* রাসূল (স.) এর সুন্নাত সুর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা | তিনি এত তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন যে, অনেক সময় সাহাবীগণ বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল, সন্ধ্যা হোক না, এখনো তো দিন শেষ হলো না ! তিনি বলতেন, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে হবে | বিভিন্ন হাদীসে রয়েছে যে, সাহাবীগণ সর্বদা শেষ সময়ে সাহরী খেতেন এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতেন | রাসূল (স.) বলেন:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ
সাহল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: লোকেরা যতদিন শীঘ্র ইফতার করবে [১], ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
[১] হাদীসে জলদি জলদি ইফতার করার জন্য খুব তাগিদ দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হবে। চোখে সূর্যাস্ত দেখে ইফতার করা যায় । সূর্যাস্ত দেখতে না পাওয়া গেলে সূর্যাস্তের সময়সূচী বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায় । রেডিও ও টেলিভিশনে সূর্যাস্তের সময় ঘোষণা করা হয়, খবরের কাগজেও সূর্যাস্তের সময় লেখা হয় । আমাদের দেশে ইফতারের সময়সূচী প্রকাশ করা হয়-যেগুলিতে সূর্যাস্তের সময়ের সাথে ১ মিনিট বা ২ মিনিট বা ৫ মিনিট যোগ করে ইফতারের সময় বলে লেখা হয় । কিন্তু হাদীসে উল্লেখিত কল্যাণ লাভ করতে চাইলে সূর্যাস্তের সময় জেনে নিয়ে সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে । সূর্যাস্ত হয়ে গেলেও ইফতার না করে বসে বসে অন্ধকার করা ইহুদী ও নাসারাদের কাজ । (আবূ দাউদ ২২৫৩, ইব্নু মাজাহ ১৬৯৮)
সহীহ বুখারী, হাদীস-১৯৫৭ |
--------------------------------------------------------------------------
* " আমরা নবীগণ আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রথম সময়ে ইফতার করতে ও শেষ সময়ে সাহরী খেতে |" -হাইসামী,মাজামউয যাওয়াইদ-২/১০৫,৩/১৫৫ | হাদীসটির সনদ সহীহ |
--------------------------------------------------------------------------
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ " كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى رُطَبَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَرُوِيَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُفْطِرُ فِي الشِّتَاءِ عَلَى تَمَرَاتٍ وَفِي الصَّيْفِ عَلَى الْمَاءِ .
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাগরিবের) নামায আদায়ের পূর্বেই কয়েকটা তাজা খেজুর দ্বারা ইফ্তার করতেন। তিনি তাজা খেজুর না পেলে কয়েকটা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন আর শুকনো খেজুরও না পেলে তবে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।
-সহীহ্, ইরওয়া (৯২২), সহীহ আবূ দাঊদ (২০৪০)
এই হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। অপর বর্ণনায় আছেঃ শীতের সময় শুকনো খেজুর দ্বারা এবং গ্রীষ্মের সময় পানি দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফ্তার করতেন।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৬৯৬ |
--------------------------------------------------------------------------
*" ইফতারের জন্য রাসূল (স.) এর নির্দেশ হলো খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার করা | তিনি সম্ভব হলে গাছ পাকা টাটকা রুতাব খেজুর, না হলে খুরমা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন | খেজুর না পেলে তিনি পানি মুখে দিয়ে ইফতার করতেন | তিনি ইফতারিতে তিনটি খেজুর খেতে পছন্দ করতেন |" যিয়া মাকদিসী, আল-মুখতারাহ-৫/১৩১-১৩২ |
--------------------------------------------------------------------------
* সাহরীর সময় রোজাদারদের ডাকা মুসলিম উম্মাহর একটি বরকত রীতি | বর্তমানে প্রত্যেক মসজিদে মাইক থাকার কারণে বাড়ি বাড়ি বা মহল্লার মধ্যে যেয়ে ডাকার রীতি উঠে গিয়েছে | মসজিদের মাইক থেকেই ডাকা হয় | তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ডাকার উদ্দেশ্যে যারা সাহরী খেতে চান তাদেরকে ঘুম ভাঙ্গতে সাহায্য করা | এইজন্য ফজরের আযানের ঘণ্টাখানেক আগে কিছু সময় ডাকাডাকি করায় যথেষ্ট | বর্তমানে অনেক মসজিদে শেষ রাতে এক দেড় ঘণ্টা একটানা গজল - কেরাত পড়া হয় ও ডাকাডাকি করা হয় | বিষয়টি খুবই নিন্দনীয় ও আপত্তিকর কাজ | অনেকেই সাহরীর এ সময়ে খাওয়ার আগে বা পরে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন, বা তেলাওয়াত করেন, কেউ বা সাহরী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, কারণ সকালে তার কাজ আছে, অনেক অসুস্থ মানুষ থাকেন | এরা সকলেই এরূপ একটানা আওয়াজে ক্ষতিগ্রস্ত হন | বান্দার হক্কের দিকে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখা দরকার |
* সাহরী ও ইফতার খাওয়ার অর্থ এ নয় যে, সারাদিন যেহেতু খাবো না, সেহেতু এ দু সময়ে দ্বিগুণ খেয়ে সারা দিন জাবর কাটবো ! এরূপ খেলে তো সিয়ামের মূল উদ্দেশ্যেই নষ্ট হলো | সাহরী ও ইফতার খাওয়ার অর্থ স্বাভাবিকভাবে আমরা যা খায় তাই খাওয়া | সমাজে প্রচলিত আছে যে, সাহরী ও ইফতারীতে বা রমাদানে যা খাওয়া হবে তার হিসাব হবে না | এজন্য আমরা রমাদান মাসকে খাবার বানিয়ে ফেলেছি |বস্তুত, হিসাব হবে কিনা তা চিন্তা না করে, সাওয়াব কিসে বেশি হবে তা চিন্তা করা দরকার | রমাদান মাস মূলত খাওয়ানোর মাস | দুভাবে খাওয়ানোর নির্দেশ রয়েছে হাদীসে | প্রথমত দরিদ্রদেরকে খাওয়ানো এবং দ্বিতীয়ত রোজাদারকে ইফতার খাওয়ানো |রোজা অবস্থায় দরিদ্রকে খাওয়ানোর ফযীলত অনেক বেশী | আর ইফতার করানোর বিষয়ে রাসূল (স.) বলেন:
-------------------------------------------------------------------------
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحِيمِ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন রোযা পালনকারীকে যে লোক ইফতার করায় সে লোকের জন্যও রোযা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোযা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।
-সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৭৪৬) |
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৮০৭ |
--------------------------------------------------------------------------
*" ইফতার করানো অর্থ আনুষ্ঠানিকতা নয় | দরিদ্র সাহাবী- তাবিয়ীগণ নিজের ইফতার প্রতিবেশীকে দিতেন এবং প্রতিবেশীর ইফতার নিজে নিতেন | এতে প্রত্যেককেই ইফতার করানোর সাওয়াব পেতেন | অনেকে নিজের সামান্য ইফতারে একজন মেহমান নিয়ে বসতেন | আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা দরকার নিয়মিত নিজেদের খাওয়া থেকে সামান্য কমিয়ে অন্যদেরকে ইফতার করানো ৷ বিশেষত দরিদ্র,কর্মজীবী, রিক্সাওয়ালা অনেকেই কষ্ট করে রোজা রাখেন এবং ইফতার করতেও কষ্ট হয় | সাধ্যমত নিজেদের খাওয়া একটু কমিয়ে এদেরকে খাওয়ানো দরকার |"
*" হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রামাদান
মাসে যারা সিয়াম পালন করেন তাদের দুটি শ্রেণী রয়েছে | এক শ্রেণীর পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে | অন্য শ্রেণী ক্ষুধা-পিপাসায় কষ্ট করা ছাড়া কিছুই লাভ হবে না | প্রথম শ্রেণীর রোযাদারদের বিষয়ে রাসূল (স.) বলেন:
حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ خَالِدٍ، وَابْنُ أَبِي خَلَفٍ، - الْمَعْنَى - قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم " مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَا رَوَاهُ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو عَنْ أَبِي سَلَمَةَ .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি এ হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুত্রে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদানে সওম পালন করে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে | এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ক্বিয়াম করে তারও পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।
সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম |
সুনানে-আবু দাউদ-১৩৭২ |
--------------------------------------------------------------------------
*" দ্বিতীয় শ্রেণীর রোযাদারের বিষয়ে রাসূল (স.) বলেন :
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ رَافِعٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُبَارَكِ عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم رُبَّ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الْجُوعُ وَرُبَّ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কত রোযাদার আছে যাদের রোযার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত সলাত আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কোনোই লাভ হয় না। [১৬৯০]
[১৬৯০] আহমাদ ৮৬৩৯, ৯৩৯২, দারেমী ২৭২০, বায়হাকী ৪/২৭০, মিশসাত ২০১৪। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
সুনানে ,ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬৯o |
--------------------------------------------------------------------------
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، وَالجَهْلَ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ» رَوَاهُ البُخَارِيُّ، وَأَبُو دَاوُدَ وَاللَّفْظُ لَهُ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করলো না, আল্লাহর নিকট তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই। -শব্দ বিন্যাস আবু দাউদের।” [৭০৯]
[৭০৯] বুখারী ১৯০৩, ৬০৫৭, তিরমিয়ী ৭০৭, ২৩৬২, আবূ দাউদ ২৩৬২, ইবনু মাজাহ ১৬৮৯, আহমাদ ৮৫২৯, ১০১৮৪
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৬৬৩ |
-------------------------------------------------------------------------
*" যে ব্যক্তি রামাদান মাস পেল, কিন্তু এই মাসে তাকে ক্ষমা করা হলো না সেই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে চির-বিঞ্চত বিতাড়িত |" হাকিম, আল-মুসতাদরাক 8/১৭০-আলবানী সহীহুত তারগীব ১/২৬২ |
----------------------------------------------------------------------
*" রাসূল (স.) বলেন: পানাহার বর্জনের নাম সিয়াম
নয়। সিয়াম হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করা | ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ৮/২৫৫-আলবানী,সহীহুত তারগীব-১/২৬২ |
-----------------------------------------------------------------------
*" সিয়াম অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল হারাম, মাকরূহ ও পাপ বর্জন করার সাথে সাথে হালাল খাদ্য, পানীয় ও সম্ভোগ থেকে নিজেকে বিরত রাখা | এভাবে হৃদয়ে সার্বক্ষণিক আল্লাহর সচেতনতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ্য রেখে শত প্রলোভন ও আবেগ দমন করে সততা ও নিষ্ঠার পথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখার নাম সিয়াম | যদি আপনি কঠিন ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়ে ও আল্লাহর ভয়ে তাঁর সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রাখেন, অথচ সামান্য রাগের জন্য গালি, ঝগড়া ইত্যাদি হারাম কাজে লিপ্ত হন, মিথ্যা অহংকার বোধকে সুমুন্নত করতে পরনিন্দা, চোগলখুরী ইত্যাদি ভয়ংকার হারামে লিপ্ত হন, সামান্য লোভের জন্য মিথ্যা, ফাঁকি, সুদ, ঘুস, ও অন্যান্য যাবতীয় হারাম নির্বিচারে ভক্ষণ করেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত জানুন যে, আপনি ইসলামের নামে আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে লিপ্ত আছেন | ধার্মিকতা ও ধর্ম পালনের মিথ্যা অনুভতি ছাড়া আপনার কিছুই লাভ হচ্ছে না | " রাসূল (স.) বলেছেনঃ
حَدَّثَنَا أَبُو مُوسَى، مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ بِأَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَنَسٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পাপ, অন্যায় কথাবার্তা (গীবাত, মিথ্যা, গালিগালাজ, অপবাদ, অভিসম্পাত ইত্যাদি) ও কাজ যে লোক (রোযা থাকা অবস্থায়) ছেড়ে না দেয়, সে লোকের পানাহার ত্যাগে আল্লাহ্ তা’আলার কোন প্রয়োজন নেই।
-সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৬৮৯), বুখারী
আনাস (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৭০৭ |
--------------------------------------------------------------------------
*" সিয়াম শুধু বর্ষনের নাম নয় | সকল হারাম মাকরূহ বর্জনের সাথে সাথে সকল ফরয-ওয়াজিব ও যথাসম্ভব বেশি নফল মুস্তাহাব কর্ম করাই সিয়াম | বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় যে, রামাদান মাসে নফল-ফরয সকল ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায় | এজন্য সকল প্রকার ইবাদাতই বেশি বেশি আদায় করা দরকার | সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রামাদান মাসে উমরা আদায় করা রাসুল( স.) এর সাথে হজ্জ করার সমতুল্য | যদি কেউ রোযা অবস্থায় দরিদ্রকে খাবার দেয়, অসুস্থ মানুষকে দেখতে যাই এবং জানাজায় শরিক হয় তবে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন | এ ছাড়া হাদীসে রামাদানে বেশি বেশি তাসবীহ, তাহলীল, দুআ ও ইসতিগফারের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে | রাসূল (স.) বলেছেন যে, রোযা অবস্থায় দুআ ও ইফতারের সময়ের দুআ অাল্লাহ কবুল করেন |
*** আসুন আমরা সবাই মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পবিত্র মাহে রামাদানে সঠিকভাবে সিয়াম পালন করি,এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই,!করোনাভাইরাসের! মহামারীর গযব থেকে আল্লাহ আমাদের পরিবারকে হেফাজত করুন |দেশকে রক্ষা করুন |
*- দোয়ার মুহতাজ -*
মাওলানা জিয়াউল ইসলাম,যুক্তিবাদী
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক
কলারোয়া,সাতক্ষীরা|
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]