দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর প্রকাশ্যে রুকন সম্মেলন করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বিগত সাড়ে ১৭ বছরে এই জাতিকে অনেক জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া সব মানুষই জুলুমের শিকার হয়েছেন।
২৮ অক্টোবরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন লোগি বৈঠা দিয়ে গণতন্ত্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছিল। সেদিনই এ দেশ পথ হারিয়ে ছিল। সেদিন তারা লাশের উপর উঠে নেচেছিল। লাশ চুরি করতে চেয়েছিল। ২৮ আগস্ট যাদের খুন করা হয়েছে তারা কারও উপর ঢিল ছুড়েনি। তাদের অপরাধ ছিল তারা জামায়াত ইসলামীর সভায় যোগ দিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পর আবার ২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট এদেশ পথ ফিরে পেয়েছে।
২৮ তারিখের পর এক সাজানো নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে একটি দল। এখন দলের মানুষও তাদের নাম নিতে চায় না। সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় আসার দুই মাস পরেই ৫৭ জন চৌকস সেনাকর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছিল। সেদিন তাদের পরিবারকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। লাশ ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এটা নিয়ে করা সেনাবাহিনীর তদন্তের রিপোর্ট সেনাবাহিনী ও জানলো না, সারা বিশ্বের কেউ জানলো না। জেলহাজতে এই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা কয়েদির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে স্বীকার করে বলেছিল এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের হাত ছিল।
শফিকুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালের ৫মের মতো করে যারা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে সাফ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন তারা আজ কোথায়। মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতেও পারলেন না। আমাদের উপর সমস্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, আমাদের নড়তেও দেয়নি। মাঠে একতরফা খেলানো হয়েছে। শাহাবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে জিনিসও সাপ্লাই হয়েছে। কাড়ি কাড়ি অর্থের যোগান দেওয়া হয়েছে। সংসদ থেকে একজন বলেছিলেন আমার শরীর সংসদে কিন্তু মনটা পড়ে আছে শাহাবাগে।
দুঃখজনকভাবে দু একজন আলেম সেদিন এই অপকর্মের সঙ্গী হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা জ্ঞানী নয় জ্ঞানপাপী। তাদের মানুষ ভুলে যাবেনা, তাদের প্রাপ্য তারা পাবেন।
হেফাজত ইসলামের মতো অরাজনৈতিক একটি দলের ওপর ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তা আজও মানুষ জানেনা। একবার তারা বললো ১৮ জন, আবার বললো কেউ মারা যায়নি।
জামায়াতের আমির বলেন, সম্প্রতি আন্দোলনের বিজয়ের চারদিন আগে তাদের একজন বললো বেশি বাড়াবাড়ি করলে ৫ ই মে শাপলা চত্বরের মতো করা হবে। এই বক্তব্যের পর এক সপ্তাহও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। যাদের বলেছিলেন তারা তো আছে। আপনারা এখন কোথায়। মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতে পারলেন না। গর্ব অহংকার করবেন না। এরকমটা আল্লাহ পছন্দ করেন না।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলন সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো.গোলাম রাজ্জাক। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুবারক হোসেন, উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা.ফখরুদ্দিন মানিক প্রমুখ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]