ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। প্রতি ইউনিয়নে গড়ে পাঁচ থেকে দশজন বা তারও অধিক দলীয় নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। দলীয় প্রতীক পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, পৌরসভার জয়ের ধারাবাহিকতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধরে রাখতে চান তারা। এ লক্ষ্যে ত্যাগী, যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত নেতাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। পৌরসভার নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে তারা। আগে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী বা তাদের সমর্থক ছিলেন তাদের এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনেই তৃণমূলের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়। নিয়ম মেনে তারা ভোটের মাধ্যমে কমপক্ষে তিনজনের করে প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠাবে। কিন্তু অনেক সময় কেউ কেউ এটা করতে চায় না। দলের যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ‘মাই ম্যানদের’ নাম পাঠায়। এবার এই বিষয়ে আমরা খুবই কঠোর অবস্থানে। কেউ এগুলো করলে তাকে বা তাদের জবাবদিহি করতে হবে। দোষী প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে আমরা এবার কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেইনি। আওয়ামী লীগের নীতি অনুযায়ী যারা আগের কোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী ছিলেন বা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিলেন এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের আর কোনোভাবেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যারা দলের বিপক্ষে কাজ করেছিল, তারা ভবিষ্যতে আর কোনোদিন দলের মনোনয়ন পাবে না।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা তৈরি করে। আমাদের প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রায় ৫-১০ জন করে যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে খুঁজে বের করা কষ্টকর।
তবে তৃণমূল থেকে ভোট করে পাঠানো রেজুলেশনের তালিকা ও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে ত্যাগী, যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত নেতাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়মী লীগের দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ২৮(৩)(ঙ) অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের প্যানেল তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভার আয়োজন করবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থীদের একটি প্যানেল সুপারিশের জন্য কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। প্যানেলটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের (মোট ৬ জন) যুক্ত স্বাক্ষরে সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে দলের ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ের দপ্তর বিভাগে জমা দিতে হবে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় গ্রামগঞ্জ ও পাড়া-মহল্লায় সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগও তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী কৌশল ও প্রার্থী নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীনরা চাইছে- পৌরসভার মতো জয়ের ধারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ধরে রাখতে। তাই আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা না হলেও শুরু হয়েছে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। দলীয় নিজস্ব টিম, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীর হাতেই ইউপিতে নৌকা তুলে দিতে চান দলের নীতিনির্ধারণী মহল। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের রেজুলেশন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রার্থী প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- গঠনতন্ত্রের ২৮(৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ গ্রহণপূর্বক কমপক্ষে তিনজনের একটি প্যানেল প্রস্তাব করতে হবে।
নির্বাচনী আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নামের (জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী) সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণ করতে হবে। প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং রাজনৈতিক পরিচিতি সংবলিত একটি সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত অবশ্যই প্রেরণ করতে হবে- যা বাধ্যতামূলক।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)