ইরানি বিজ্ঞানীদের হ*ত্যার ‘হিট লিস্ট’ ফাঁস


ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের একটি উচ্চমাত্রার গোপন অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যার কোডনাম—অপারেশন নার্নিয়া। এ অভিযানের মাধ্যমে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানীদের একে একে হত্যা করেছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
এক নজরে পুরো অভিযান
গত শুক্রবার শুরু হওয়া আরেক অভিযান ‘রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতারা এবং পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্ত প্রধান বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে হামলা চালায়। এর মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর ১২০ জন সদস্য এবং বিমানবাহিনীর সমন্বিত দল।
অভিযান শুরুর আগে ইরানিদের বিজ্ঞানীদের ৪টি স্তরে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়—যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছেন সামরিক দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা এবং যাদের পরিবর্তন করা সবচেয়ে কঠিন এমন ব্যক্তিরা। এর ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ‘হিট লিস্ট’, যেখানে সবচেয়ে বেশি হুমকি হয়ে ওঠা বিজ্ঞানীদের নাম ছিল শীর্ষে।
নিহত শীর্ষ বিজ্ঞানীরা
অভিযানে নিহত ইরানি বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন—
ফেরেইদুন আব্বাসি – পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
মোহাম্মদ মাহদি তাহরানচি – পদার্থবিদ
আকবর মাতলালি জাদে – কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
সাঈদ বেরাজি – উপাদান প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
আমির হাসান ফাকাহি – পদার্থবিদ
আবদুল হামিদ মিনুশাহর – রিঅ্যাক্টর পদার্থবিদ
মনসুর আসগারি – পদার্থবিদ
আহমদ রেজা দাওলপারকি দরিয়ানি – পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
আলি বাখায়ী কাতেহরেমি – যান্ত্রিক প্রকৌশলী
‘টার্গেট ব্যাংক’ তৈরির গল্প
অভিযানের পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানান, আমরা একটি লক্ষ্য-ব্যাংক তৈরি করছিলাম। ব্রেকথ্রু আসে যখন একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি ও একটি বিমান ঘাঁটি শনাক্ত করি। তারপর শুরু হয় বিভিন্ন দলে ভাগ করে মিশন— কে রাডার ধ্বংস করবে, কে কমান্ড সেন্টার, আর কে বিজ্ঞানীদের মারবে।
সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার: নতুন কৌশল
এই অভিযানের আরেক চমকপ্রদ দিক হলো ইসরায়েলের নতুন কৌশল—মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে ‘পার্সিয়ান ভাষায়’ একটি বার্তা এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা হয়, যেখানে ইরানি নাগরিকদের মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা বুঝতে পারি, আপনি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। আমাদের প্রিয়জনেরা যারা এই পরিস্থিতির শিকার, তারাও ইসরায়েলকে বার্তা দিচ্ছে যেন ইরানকে গাজা বা লেবাননের মতো ভাগ্য না ভোগ করতে হয়।’
বার্তার শেষে মোসাদের একটি লিংক শেয়ার করে বলা হয়—ভিপিএন বা এনক্রিপটেড সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোসাদের এই ‘অপারেশন নার্নিয়া’ কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়, এটি ইরানের পরমাণু প্রকল্পে দীর্ঘদিনের দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের সরিয়ে দেওয়ার কৌশলী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ইসরায়েল একদিকে যেমন ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি থামাতে চায়, অন্যদিকে তেহরানের অভ্যন্তরে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
এ অভিযান আগামী দিনগুলোতে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: দ্য জেরুজালেম পোস্ট

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
