বিবিসি’র প্রতিবেদন
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন: দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের পক্ষেই বাংলাদেশ


মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক মুসলিম দেশই যখন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের প্রতি সংহতির কথা আবারো জানালো বাংলাদেশ।
রবিবার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দিবসে এ সংক্রান্ত একটি বার্তা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। বার্তাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিনের সংকট নিরসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দুই পক্ষের জন্য আলাদা দুটি দেশ।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসছে।
কিন্তু সম্প্রতি অনেকটাই বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি মুসলিম দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
এমনকি সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর এক গোপন সৌদি আরব সফর এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বৈঠকও অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের একটি প্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যস্ততা করছে আমেরিকা।
বার্তায় যা আছে
শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ গতকাল এই দিবসটিতে আলাদা বার্তা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তাতে বলেছেন, “পূর্ব জেরুজালেম-আল কুদস আল শারিফকে রাজধানী রেখে দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের আঙ্গিকে ১৯৬৭ সালের সীমানাভিত্তিক একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে আমরা আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি।”
শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নিজে যেহেতু স্বাধীনতার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে তাই স্বাধিকারের প্রশ্নে বিশ্বের যেকোনো জাতির সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।
“১৯৭১ সালের ভয়াবহ গণহত্যার কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে, তা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণ যেভাবে অন্যায় ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সোচ্চার।”
শেখ হাসিনা তার বার্তায় রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, একই ধরনের চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারে সহিংসতার হাত থেকে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের আহবান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রশ্নে তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন।
ইসরায়েলি সেনাদের তিনি ‘দখলদার’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস বন্ধ এবং অধ্যুষিত এলাকায় ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপন বন্ধ করার আহবান জানান তিনি।
যে পটভূমিতে এই বার্তা
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের জনগণের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে।
এমনকি এ কারণে ইসরায়েল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর স্বীকৃতি দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ।
কিন্তু বিশ্বের বেশ কটি আরব দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের দিকে ঝুঁকছে।
অগাস্ট মাসে ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এরপর বাহরাইন ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে।
এমনকি সৌদি আরবও ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগুচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গোপনে বৈঠক করেছেন এই খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা ও লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের আয়ের উৎস মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরবে। এমন পটভূমিতে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোর অবস্থানের বিপরীতে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশের এই অবস্থান বাংলাদেশের এই অবস্থান একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
