পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপমাত্রা। গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। শুধু গরমেই না, শীতকালেও এখানকার আবহাওয়া থাকে চরমভাবাপন্ন। সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে জীবন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
তীব্র তাপপ্রবাহের পাশাপাশি ঈশ্বরদীতে শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডও রয়েছে। ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, গত ১৮ দিন যাবত ঈশ্বরদীতে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজমান ছিল। ১৭ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজমান রয়েছে। ৩০ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ উপজেলায় কোনো বনভূমি নেই। সরকারিভাবে সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষ বাগান ও ছায়াসমৃদ্ধ বৃক্ষ রোপণ করেছেন। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। পাশাপাশি পুরো উপজেলা জুড়ে কংক্রিট ও লোহার তৈরি অসংখ্য স্থাপনা রয়েছে। এখানকার বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নিঃসৃত দূষিত ধোঁয়া পরিবেশ বিপর্যয় করছে। এছাড়াও এ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মা নদীতে পানি সংকটের কারণে এ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখাসহ ৫টি নদীর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে। ফলে প্রতি বছরই গ্রীষ্মকালে এ উপজেলার উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ছে।
বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত, পাবনা) মতলুবুর রহমান বলেন, পাবনা জেলায় কোনো সরকারি বনভূমি নেই। সামাজিক বনায়নের আওতায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যে পরিমাণ বনভূমি এ জেলায় প্রয়োজন এটি হয়তো এখানে নেই।
পাবনা বন সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেস্টার) ফিরোজ আহমেদ বলেন, যেকোনো এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু পাবনায় সরকারি কোনো বনভূমি নেই। সামাজিক বনায়ন ও জনগণের ব্যক্তিগত বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ রয়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। উপজেলা পর্যায়ে আমাদের বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তাই ঈশ্বরদী উপজেলার বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণের বিষয়টি জানা নেই।
উপজেলা বন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, এ উপজেলায় সরকারি বনভূমি নেই। তবে সরকারিভাবে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের আওতায় সড়ক-মহাসড়ক ও রেললাইনের ঢালে বৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি গ্রামীণ সড়কের পাশে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এ উপজেলায় শতকরা কত শংতাশ ভূমি বৃক্ষ আচ্ছাদিত এমন কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।
তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গরমে ঈশ্বরদীর তীব্র তাপপ্রবাহ ও শীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার জন্য ভৌগলিক অবস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মাঝ বরাবর কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। কর্কটক্রান্তি রেখার নিচে ঈশ্বরদীর অবস্থান। তাই গরমের সময় প্রচণ্ড দাবদাহ আর শীতে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন হয় এখানে। একইসঙ্গে তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্যের কারণ হিসেবে ঈশ্বরদীর ছোট বড় অসংখ্য কলকারখানা ও রেলের স্থাপনার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ভৌগলিক কারণে মূলত ঈশ্বরদীতে গরমে তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায় এবং শীতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়। ঈশ্বরদীর অবস্থান অনেকটাই কর্কটক্রান্তি রেখার ঠিক নিচে। সেজন্য সূর্যের কিরণ এখানে প্রচণ্ড তাপ ছড়ায়।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, শহরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় শত শত গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু জায়গা সংকটের কারণে সড়কের পাশে আর গাছ লাগানো সম্ভব হয়নি। পৌর শহরে পর্যাপ্ত গাছ-গাছালি না থাকায় তাপমাত্রার ওপর বেশ প্রভাব পড়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পৌরসভার পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। পৌর শহরের সড়কের পাশে প্রচুর বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]