সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সর্বশেষ উপকূলীয় ইউনিয়ন প্রতাপনগর ইউনিয়নে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মরুময়তা রোধে এক হাজার বৃক্ষচারা রোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রাকৃতিক প্রতিরোধ বলয় গড়ে তোলা, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা এবং স্থানীয় জনগণকে জলবায়ু অভিযোজন সক্ষমতায় আরও শক্তিশালী করে তোলা।
সানোফি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে, অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের সহযোগিতায় এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের উদ্যোগে রবিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ২০২৫’ উদ্বোধন করা হয়। “পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ফলজ, বনজ ও ঔষধি প্রজাতির মোট এক হাজার চারা রোপণ করা হয়। এসব গাছ বড় হলে শুধু সবুজায়নই নয়, পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক সুবিধা এবং খাদ্য ও ঔষধি চাহিদা পূরণেও অবদান রাখবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে এসিএফের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালেদা হোসেন মুন, জেষ্ঠ্য কর্মসূচি কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম, এ এইচ এম শাহরিয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমান বিহারী মণ্ডল। প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু দাউদ ঢালী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্াসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতাপনগর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লবণাক্ততার কারণে এ অঞ্চলে সব ধরনের গাছ জন্মাতে পারে না, ফলে এখানে গাছের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তিনি বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে হলে প্রকৃতির কাছ থেকে শক্তি নিতে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজের বাড়ি, রাস্তার ধারে কিংবা পতিত জমিতে অন্তত একটি করে গাছ লাগানো।” তিনি আয়োজকদের এ মহৎ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমান বিহারী মণ্ডল বলেন, প্রতাপনগর সাতক্ষীরার উল্লেখযোগ্য একটি দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির শিকার। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শক্তিশালী হাতিয়ার হলো বৃক্ষরোপন। বৃক্ষরোপন করতে হলে অবশ্যই বুঝেশুনে বৃক্ষরোপন করতে হবে। যার মধ্যে থাকতে পারে নিম, কদবেল, শিশুগাছ প্রভৃতি।
এসময় প্রতাপনগর ইউনিয়নের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, যুব সমাজের সদস্য ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। উপস্থিতরা আশা প্রকাশ করেন, এ কর্মসূচি নিয়মিতভাবে চলতে থাকলে প্রতাপনগরসহ আশপাশের এলাকায় একটি টেকসই সবুজ প্রতিরোধ বলয় গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরণের প্রকল্প সমন্বয়কারী নাজমা আক্তার, প্রকল্প কর্মকর্তা আল মামুন, মাঠ কর্মকর্তা রহিমা খাতুন, আরিফুজ্জামান শিমুল, তানভির হোসেন রাজ।
আয়োজকদের পক্ষে উত্তরণের প্রকল্প সমন্বয়কারী নাজমা আক্তার জানান, দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস এবং পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা গড়ে তুলতেই এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে এ ধরনের কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই বলেও তারা মন্তব্য করেন।
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালেদা হোসেন মুন বলেন, “বনায়ন শুধু পরিবেশ সংরক্ষণই নয়, বরং মানুষের টেকসই জীবনযাপন নিশ্চিত করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রতাপনগরের এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জলবায়ু অভিযোজনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে।”
স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেন, কর্মসূচি নিয়মিতভাবে চলতে থাকলে প্রতাপনগরসহ আশপাশের এলাকায় একটি টেকসই সবুজ প্রতিরোধ বলয় গড়ে উঠবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]