হঠাৎ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কবির বিন আনোয়ারকে নিয়োগ দেওয়ার এক মাসের ব্যবধানে এই পদ আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে দেশবাসীর কৌতুহল ছিল।
প্রথমে কবির বিন আনোয়ারকে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হলেও তিনি আশাবাদী ছিলেন। জানিয়েছিলেন, হয়তো ভালো কিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে তার স্থলে অন্য একজনকে বসিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কবির বিন আনোয়ারের জন্য সত্যি ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কিংবা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের গুরু দায়িত্ব তার ওপর পড়তে পারে। যেটি এতোদিন সামাল দিয়ে এসেছিলেন এইচটি ইমাম।
প্রবীণ এই আমলা ও রাজনীতিবিদ মারা যাওয়ার পর তার মতো দক্ষ একজনকে খুঁজছিল আওয়ামী লীগ। ধারণা করা হচ্ছে-এইটি ইমামের শূন্যতা কবির বিন আনোয়ারকে দিয়ে পূরণ করা হতে পারে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন কবির বিন আনোয়ার।
এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া তাকে নিয়ে দলের নির্বাচনি অফিসে এইচটি ইমামের কক্ষে যান।
কক্ষে প্রবেশের পর ড. সেলিম মাহমুদ ও বিপ্লব বড়ুয়া তাকে আবারও ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে কবির বিন আনোয়ার ড. সেলিম মাহমুদ ও ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে নিয়ে ওই রুমে বসে বেশ কিছু সময় আলাপ করেন।
এদিকে কবির বিন আনোয়ার দলীয় কার্যালয়ে আসার আগে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় প্রাঙ্গণে দলের বিভিন্ন নেতারা অবস্থান করেন। কবির বিন আনোয়ারের নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জের নেতাকর্মীদেরও ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অফিসের দীর্ঘদিন বদ্ধ থাকা এইচটি ইমামের কক্ষটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। নতুন করে লাগানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ঠিক করা হয় রুমের তালা, চাবি।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এই কক্ষে বসে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। তার কক্ষে বসেই কবির বিন আনোয়ারও একই দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এইচটি ইমামের চেয়ারে বসার পরে কবির বিন আনোয়ার দলের নির্বাচনি কার্যক্রম ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পাবেন বলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
কবির বিন আনোয়ার আলাপকালে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বটা কী তা সময়ে সময়ে আপনারা জানতে পারবেন। কাজের মধ্য দিয়ে তা আসতে আসতে স্পষ্ট হবে।
আপনি যে চেয়ারে বসলেন তা তো আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের চেয়ার খালি, আপনি সেই দায়িত্ব পালন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেসব কাজও থাকবে।
আপনি প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা বা দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমার নরমাল অবসর হয়েছে ৩ জানুয়ারি। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে কিছু কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। এতটুকুই আপাতত থাক।
আপনি এখানে আসার পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আপনাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন, উনার সঙ্গে কি কথা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন সেখানে অনেক ভিড় ছিল। আলোচনা তেমন কিছু হয় নাই। তবে আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে যদি বলি, আমার ছাত্ররাজনীতি শুরু হয়েছিলো ১৯৮০-৮১ সালে। তখন কাদের ভাই (ওবায়দুল কাদের) ছিলেন আমাদের সভাপতি। আজ তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফলে আজ আমার ফিলিংসটা হলো এমন যে, আজকে আমি আমার নিজের ঘরে ফিরে এসেছি, বাড়িতে ফিরে এসেছি, নিজের মহল্লায় কিংবা সেই গ্রামে ফিরে এসেছি।
এখন কী আপনি পুরোপুরি রাজনীতিতে সময় দেবেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা বলাই বাহুল্য যে পদে বা যেখানে কাজ করব এটা তো রাজনৈতিক অফিস। ওই যে বললাম আমি আমার পুরনো জায়গায় আবার ফিরে এসেছি। সরকারি চাকরি তো অনেকদিন করলাম। প্রায় ৩৫ বছর। আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হলো ৩ জানুয়ারি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে কাজের বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কবির বিন আনোয়ার বলেন, এটা সময়ে সময়ে জানা যাবে। সামনে আপনারা দেখবেন। ইউ সি। এখন এটা বলার মতো পরিবেশ হয় নাই।
এর আগে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কবির বিন আনোয়ার। সেখানেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এমন ইঙ্গিত পান বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ীই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান।
কবির বিন আনোয়ারের কেবিনেট সচিবের মেয়াদ শেষ হয় ৩ জানুয়ারি। এরপর তার চাকরির এক্সটেনশন না হওয়ায় তাকে নিয়ে নানা আলোচনা ডালপালা গজাতে থাকে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তখন তিনি বলেছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। হয়তো ভালো জায়গা অপেক্ষা করছে এমন ইঙ্গিতও সেদিন দিয়েছিলেন কবির বিন আনোয়ার।
সৌজন্যে: যুগান্তর
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]