হাটে ভিড়
কোরবানি উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে মানুষের বড় ধরনের চলাচলের ঘটনা ঘটবে। ব্যাপারীরা কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন, আসবেন এ–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মানুষ, বিক্রি শেষে তাঁরা ফিরেও যাবেন। এই চলাচল ও পরিবহন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এ ক্ষেত্রে জনবহুল এলাকায় হাট না বসানো, হাটে দূরত্ব বজায় রাখাসহ কিছু বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
উচিত হবে হাটে যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। বাড়িতে যিনি বয়স্ক, যাঁর ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ আছে, তাঁর হাটে না যাওয়াই ভালো। এ ছাড়া কারও যদি জ্বর, কাশি বা করোনার উপসর্গ থাকে, তবে তিনি হাটে যাবেন না। পরিবারের অনেকে মিলে, এমনকি বন্ধু-বান্ধবসহ হাটে পশু কিনতে যাওয়ার চল আছে—এটা একধরনের উৎসবই ছিল বলা চলে। এ বছর সে রকম করার সুযোগ নেই। যথাসম্ভব কম মানুষ যাওয়ার চেষ্টা করবেন। একজন কি দুজন হাটে যাবেন, মুখে অবশ্যই মাস্ক পরবেন। লক্ষ রাখুন, হাটে বিক্রেতা ও অন্যান্য মানুষ মাস্ক পরছেন কি না।
অন্যবারের মতো নানা হাট ঘুরে ঘুরে যাচাই–বাছাই করে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে ঝুঁকি বাড়াবেন না। যথাসম্ভব কম সময়ে পশু কেনার কাজটি সেরে ফেলুন। ফিরে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন বা পারলে গোসল করে নেবেন। আর যাঁদের সুযোগ আছে, তাঁরা অনলাইনে বা ফার্মে বুকিং দিয়ে পশু কিনে ফেলতে পারেন।
সংযম কাম্য
কোরবানির ক্ষেত্রে এ বছর কিছুটা সংযম প্রদর্শন করা ভালো। ধরুন, বাড়িতে বা অ্যাপার্টমেন্টে এবার কোরবানি না দিয়ে সেটা গ্রামে, কোনো দরিদ্র এলাকায়, এতিমখানা বা এ ধরনের জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দিতে পারেন। প্রতিবার হয়তো ভাইবোনে আলাদা কোরবানি দিতেন, এবার নাহয় একসঙ্গে একটি পশু কোরবানি দিলেন। একই দালানে অনেক কোরবানি হতো, সেখানে এবার কয়েকজন মিলে পশু কোরবানি দিতে পারেন। এতে ঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে। কয়েকজন বন্ধু বা সহকর্মী মিলেও দিতে পারেন। এতে মাংসের ভাগ হয়তো একটু কম পড়বে কিন্তু তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে।
পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন
নিজের বাড়িতে কোরবানি না দিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট স্থানে বা নিজেদের উদ্যোগে ঠিক করা কোনো দূরবর্তী মাঠ বা খোলা জায়গায় কোরবানির কাজ সম্পন্ন করা ভালো হবে। প্যাকেটে বা বক্সে করে মাংস নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে ভালো পন্থা। তা না হলে বাসাবাড়ির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। রাস্তায়, পথঘাটে যেখানে-সেখানে কোরবানি দেবেন না। যথাযথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করুন। বাড়ির নিচে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, বেসিন, সাবানপানির আয়োজন রাখুন। পশু কোরবানি ও ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন কসাই ও সাহায্যকারীদের বারবার হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখুন। তাঁরা মাস্ক ও গ্লাভস পরে, সম্ভব হলে পলিথিনের অ্যাপ্রোন বা ডিসপোজেবল গাউন পরে কাজ করলে ভালো।
ছুরি, বঁটি, দা ইত্যাদি যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মাংস থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নেই, কিন্তু যারা এটায় হাত লাগাবেন বা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিক্তিতে মেপে প্যাকেট করবেন বা বিলাবেন, তাঁদের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাই যত কম মানুষকে এসব কাজে নিয়োজিত করা যায়, ততই ভালো।
কাজ শেষ হলে দ্রুত ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে পুরো জায়গা, সিঁড়ি ইত্যাদি পরিষ্কার করে ফেলুন। বাড়ি নিয়ে আসার পর একজন ব্যক্তি গ্লাভস ও মাস্ক পরে মাংস প্যাকেট করা বা ভাগ করার কাজটি সারবেন।
বর্তমান পরিস্থিতে আগের মতো স্বজনদের বাড়ি বাড়ি মাংস বিলাতে যাওয়া বা ভিড় করে দরিদ্রদের মধ্যে মাংস বিতরণ এড়িয়ে চলুন। যথাসম্ভব ভিড় ও জনসমাগম এড়িয়ে কাজগুলো করুন। বারবার হাত ধোয়ার কোনো বিকল্প নেই।
নামাজ ও সামাজিকতা
ঈদগাহে বা মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। কোলাকুলি বা হাত মেলানো চলবে না। নিজের জায়নামাজ নিয়ে যাওয়া ভালো। বেশি ভিড় হয় এমন জায়গায় নামাজ না পড়ে নিজের বাড়ির কাছে বা পাড়ার মসজিদেই পড়ুন। করোনা অতিমারির সময় ঈদে একে অন্যের বাড়ি যাওয়া, বেড়ানো, দাওয়াত বা পার্টির আয়োজন করা থেকে বিরত থাকুন। যতটুকু পারা যায় প্রায় নিভৃতে ও নীরবে, অতি আয়োজন এড়িয়ে, ভিড় ও জনসমাগম এড়িয়ে এবারকার ঈদ পালন করার চেষ্টা করুন।
নিজে ও সবাই মিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন।
আরও যা মনে রাখবেন
l বর্ষাকালে এখন অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তাই ডায়রিয়া যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকুন। ঈদের সময় খাওয়াদাওয়া হবে। তবে অতিরিক্ত খাবেন না, বদহজম হতে পারে। গরু ও খাসির মাংসে এমনিতেই চর্বি বেশি, তাই রান্নায় তেল কম ব্যবহার করুন। কম মসলায় রান্না করার একটা ভালো উপায় হলো রান্নায় টক দই, লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করা। চর্বি ফেলে দিয়ে কাবাব, স্টেক, গ্রিল ইত্যাদি করে খাওয়া বরং ভালো। একবারে অনেক রান্না করে বেশ কয়েক দিন রেখে বাসি করে খাবেন না।
● মাংস বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই প্রতিবেলা সালাদ, সবুজ শাকসবজি খাবেন। প্রচুর পানি পান করবেন। ঈদের সময় প্রতিদিন মাংস খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
● অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা যেন না হয়, সে জন্য অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মসলা এড়িয়ে চলুন। অতিভোজন করবেন না। হৃদ্রোগ, কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে মগজ, নেহারি, পায়া ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো।
● রোজ খানিকটা হাঁটাহাঁটি করতে ভুলবেন না। এতে অতিরিক্ত ক্যালরি যা গ্রহণ করেছেন তা ক্ষয় হবে। ভরপেট খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাবেন না। তাতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়বে। সময়মতো খাওয়াদাওয়া করবেন।
● ঈদের সময়ের ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য নিয়মিত ওষুধ খেতে ভুলবেন না। সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।
চেয়ারম্যান, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা
সুত্র প্রথম আলো
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]