করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে রাজধানীবাসী অনেকেই এবার গ্রামমুখী হননি, ফলে ‘ঈদ মানে ফাঁকা ঢাকা’- এটা এবার বলা যাবে না।
ঈদের পরদিন রোববার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। কোরবানির দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন স্থানে অনেকে পশুও জবাই করেছেন।
রামুপরা, বাড্ডা, বেইলি রোড, হেয়ার রোড, সার্কিট হাউজ রোড, ইস্কাটন গার্ডেন সড়ক, মগবাজার, কাকলাইল, বিজয়নগর, শাহবাগ, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবারের ঈদের পরের দিনের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
অন্যসময় কোরবানির ঈদের পরদিন ঢাকার অনেক এলাকাতেই বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকে। তবে রোববার বেইলি রোডের কয়েকটি কনফেকশনারি খোলা দেখা গেল। মালিবাগ, শান্তিনগর বাজারের দুই পাশের দোকানগুলোও ছিল খোলা।
প্রতিবছর ঈদে রাজধানী থেকে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামে। অনেকে গ্রামের বাড়িতেই কোরবানি দেন। ছুটির কয়েকটা দিন প্রিয়জনদের সাথে কাটাতে ঢাকা ছাড়েন অর্ধ কোটি মানুষ। ফলে ছুটির সময়টায় ঢাকা হয়ে পড়ে নিশ্চুপ, নির্জন। যানবাহন চলাচলও একেবারে কমে যায়।
এবারও ঈদের আগে শেষ বেলায় কিছু মানুষ গ্রামের পথ ধরেছে, তবে সংখ্যায় তা অন্যবাদের তুলনায় কম।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত কয়েক মাস আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ি যাওয়া ছিল একপ্রকার বন্ধ। গত রোজার ঈদের সময় লকডাউনের মধ্যে ঘরবন্দিই থেকেছে ঢাকাবাসী। তবে এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে কেউ কেউ বেড়ানোর জন্যও বের হচ্ছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা আহসান হাবিব থাকেন সিদ্দেশ্বরীতে। রোববার সকালে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মিরপুরে আত্মীয়বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি।
তিনি বললেন, “ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাইনি করোনা মহামারীর আতঙ্কে। তবে মিরপুরে যাচ্ছি খালার বাসায়। বাচ্চাদের নিয়ে একটু ঘোরাও হল, আবার মুরুব্বিদের সালাম করাও হল।”
এবার পরিস্থিতি যে অন্য ঈদের মত না, কাকরাইল মোড়ের চা বিক্রেতা আইনউদ্দিনেরও তা মনে হচ্ছে।
“১২ বৎসর ঢাকায় আছি। সব সময় দেখছি ঈদের পরের দিন, তার পরের দিন ঢাকা এককারে ফাঁকা থাকে। মনে হইত কার্ফু দিছে। আর এখন দেখেন কত্ত গাড়ি রাস্তায় নামছে।”
সোয়া ১১টা দিকে রমনা পার্কের কাছে গিয়ে দেখা গেল সেনা সদস্যদের একটি দল করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছেন। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কি না- তা দেখছেন।
একজন রিকশা চালক মাস্ক না পরায় তাকে থামিয়ে সেনা সদস্যরা বোঝালেন যে এটা ঠিক না। প্রাইভেট কার, অটোরিকশায় চলাচলকারীদেরও থামিয়ে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। সেনা সদস্যদের গাড়িতে ব্যানারেও লেখা ছিল- ‘স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন’।
বিজয়নগরের কাছে অটোরিকশা চালক হুয়ায়ুন কবির বললেন, সকাল ৮টায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে প্রথমে মীরপুর এবং এরপর সেখান থেকে সায়েদাবাদ ও কমলাপুরে দুটো ‘ট্রিপ’ দিয়েছেন। তার বিচারে, ঈদের পরের দিনের হিসেবে ‘কামাই’ খারাপ হয়নি।
“গতবছর কোরবানির ঈদে নোয়াখালীতে বাড়িতে ছিলাম। তবে রোজার ঈদের ঢাকায় ছিলাম। ঈদের পরের দিন তো ঢাকা ফাঁকা থাকে। এইবারের মত গাড়ি-ঘোড়া তখন দেখি নাই।”
পুরান ঢাকার বাসিন্দা সানজিদা খাতুন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক। সকালে তিনি নয়া পল্টনে গিয়েছিলেন এক আত্মীয়র বাসায়।
“ঢাকা থেকে এবার মানুষ গ্রামে গেছে কম। ঈদের দিন বাসাতেই ছিলাম। ভাবলাম আজ রাস্তা ফাঁক থাকবে, এই ফাঁকে আত্মীয়ল বাড়ি ঘুরে আসি। কিন্তু রাস্তায় নেমে দেখলাম যানবাহন অন্য ঈদের তুলনায় বেশি।”
বেইলি রোড ও মালিবাগ মোড়ে কোরবানির দ্বিতীয় দিনেও কয়েকটি পশু করোবানি দিতে দেখা গেল।
বেইলি রোডের এক অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা হাসান জাফির জানালেন, ঈদের আগের দিন হাটে গিয়ে গরু পাননি, ফলে ঈদের দিন তার কোরবানি দেওয়া হয়নি।
“অনেক যোগাযোগ করে এক খামারীর কাছে থেকে গরু পেয়েছি। তাই আজ কোরবানি দিলাম। শেষ পর্যন্ত দিতে পেরেছি, সেটাই ভালো লাগছে।”
সুত্র বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]