সারা দেশে নতুন ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর' এবং 'শেখ জামাল ডরমেটরি ও রোজী জামাল ডরমেটরি'র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় উভয় বিভাগের আওতায় ২৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করবে, সেই ঘোষণা আমি দিচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনিকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমি জানি, আজকে ইচ্ছা করলে ঘোষণাটা করে দিতে পারেন। তাহলে আমাদের দেশের মানুষের জন্য এটা খুবই উপকার হবে।”
শিক্ষাকে সব সময় গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, “আসলে একটা জাতি যদি শিক্ষিত না হয়, তাহলে সেই জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, শিক্ষায় অর্থ খরচ হচ্ছে বিনিয়োগ, এটা আমরা খরচ হিসেবে দেখি না। যে কারণে আমরা সব সময় ব্যবস্থা নিই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারি করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরার পর আরও প্রায় ৩৬ হাজার স্কুল জাতীয়করণ হয়েছে।
“তাছাড়া আমরা এমপিওভুক্ত করে দিচ্ছি। প্রায় সারা দেশে বেসরকরি উদ্যোগে যেসব বিদ্যালয়গুলো… প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- এগুলোর যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য…
“বিভিন্ন সময় আমরা প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, পরীক্ষার রেজাল্ট, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এসব কিছু আগে বিবেচনা করা হয়। মানসম্মত যেগুলো, সেগুলোর জন্য আমরা বিশেষ পদক্ষেপ নিই। সব সরকারি না করেও সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারী যাতে সরকারের কাছ থেকে বেতন পায়, সেই ব্যবস্থাটা নিই।”
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ যে অর্থ সরকার দেয়, তাকে ইংরেজিতে বলা হয় মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যখন সরকারের এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়, তাকে বলে এমপিওভুক্তি।
শিক্ষার মানের কিছু শর্ত পূরণ করে এমপিওভুক্ত হলে একটি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। এর বাইরে বাড়িভাড়া হিসেবে এক হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা এবং শিক্ষকদের জন্য বেতনের ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীদের জন্য বেতনের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ২৬ হাজার ৪৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে মোট ২ হাজার ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল।
এবার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২ হাজার ৫১টি স্কুল এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ৬৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নতুন ৬৬৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩৬টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৯টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ১৮টি ডিগ্রি কলেজের কর্মীরা এমপিও সুবিধা পাবেন।
এসএসসি, ভোকেশনাল অথবা দাখিল ভোকেশনালের ৯৭টি, এসএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির ২০০টি, ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচারের দুটি স্কুল, ২৬৪টি দাখিল মাদ্রাসা, ৮৫টি আলিম মাদ্রাসা, ৬টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১১টি কামিল মাদ্রাসা এই সুবিধায় আসছে।
তাছাড়া সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ এবং একটি করে স্কুল সরকারি করে ফেলেছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নতুন করে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ২ হাজার ৭১৬ বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার (৬ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন শেষে ২ হাজার ৭১৬টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য প্রাথমিক তালিকা করে এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটি। এ তালিকা শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে এই এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্ত করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]