ঝিনাইদহ-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। হত্যাকাণ্ডের প্রথমে শুধু সোনা চোরাচালান নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কথা উঠেছিল। কিন্তু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেফতারের পর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। খুনিদের দুই কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা। রাজনৈতিক বিরোধেও এমপি আনার খুন হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এমপি আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু গত ১৪ জুন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বর্তমানে আট দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। আনারের আসনে এমপি হতে চেয়েছিলেন তিনি।
সাতদিনের রিমান্ড চলাকালীন গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বাবু ঘটনার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জবানবন্দির আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি শিমুল ভূঁইয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার জবানবন্দিতে কাজী কামাল আহমেদ বাবুর সংশ্লিষ্টতা বর্ণিত আছে। উক্ত জবানবন্দিতে আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ও হত্যায় আর্থিক লেনদেন বিষয়ে বাবুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। আসামি বাবুর সঙ্গে ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার কিছু পরিকল্পনার কথাও জবানবন্দিতে প্রকাশ পায়।
জিজ্ঞাসাবাদে কাজী কামাল আহমেদ বাবু জানান যে, শিমুল ভূঁইয়া ১৫ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে ১৬ মে রাতে তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। এরপর ১৭ মে অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিমুল ভূঁইয়ার গাড়ির ভেতর সাক্ষাৎ করে ভিকটিমকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা সংক্রান্ত ছবি, টাকা-পয়সা লেনদেন বিষয় নিয়ে গোপনে বৈঠক করেন। আনার হত্যা/টাকা লেনদেন নিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন বাবু এসময় এমপি আনারকে হত্যার পরবর্তী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিমুল ভূঁইয়া বাবুর কাছে দাবিকৃত টাকা চান। তখন দাবিকৃত টাকার আংশিক ২৩ মে শিমুল ভূঁইয়াকে দেবেন বলে আশ্বাস দেন বাবু।
এর আগে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ করেন বাবু।
যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর নাম আসে
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রিমান্ডে থাকা শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল করিম মিন্টুর নামও উঠে আসে। আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও নাম আসে মিন্টুর। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত হয় আনার হত্যার পেছনে মিন্টুর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। এ সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও পায় ডিবি। এরপর ১১ জুন ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে আটক করা হয় মিন্টুকে। ১৩ জুন তাকে গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি। সেদিন তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারক মিন্টুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কিছু বলবেন?’ মিন্টু তখন বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এমপি নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়াটাই আমার অপরাধ।’ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়াটাই কাল হয়েছে, দাবি মিন্টুর। আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে মিন্টুকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অনেকটা ভেঙে পড়লেও পরে তথ্য দিতে থাকেন তদন্ত কর্মকর্তাদের।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের ভাই এনামুল হক ইমান বলেন, ‘গ্রেফতার বাবুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু। এছাড়া হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামন শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ তিনি। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, আনারকে হত্যার পেছনে মিন্টুর হাত থাকতে পারে। গত সংসদ নির্বাচনে আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন আব্দুর রশীদ খোকন। খোকনের পক্ষে কাজ করেন সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী।’
শুরুতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা
ডিবি সূত্রে জানা যায়, আটকের পর তদন্ত কর্মকর্তাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর পারেননি মিন্টু। বরং তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। এড়িয়ে যান গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য। ডিবির হাতে থাকা তথ্য-প্রমাণের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থানই নিতে পারেননি। পরে ডিবি অনেকটা নিশ্চিত হয় আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিন্টুই নির্দেশদাতা ও অর্থের জোগানদাতা। তার নির্দেশেই পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহীন কিলার শিমুল ভূঁইয়াকে দিয়ে একটি টিম গঠন করে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেন।
আনারের মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে যান মিন্টু
এমপি আনার খুন হওয়ার খবর আগেই জেনে যান সাইদুল করিম মিন্টু। তবে তিনি প্রকাশ করেননি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গিয়ে আনারের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে সান্ত্বনা দেন। শুধু তাই নয়, কান্নায় ভেঙে পড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও সান্ত্বনা দিয়ে পাশে ছিলেন তিনি। এসময় মিন্টুর সঙ্গে ছিলেন তারই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কাজী কামাল আহমেদ বাবু।
শিমুল ভূঁইয়া জবানবন্দিতে মিন্টুর কথা জানান
শিমুল ভূঁইয়া জবানবন্দিতে বলেন, আনারকে প্রলুব্ধ করে মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন হোয়াটসঅ্যাপে মিন্টুর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বাবু রিমান্ডে জানান, হত্যাকাণ্ডের পরে শিমুল ভূঁইয়াকে যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল সেই টাকা লেনদেনের বিষয়ে ডিজিটালি এবং ফিজিক্যালি তিনি মিন্টুর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডের প্রমাণস্বরূপ ছবি আদান-প্রদান করেন। ২৩ মে মিন্টুর কাছ থেকে দুই কোটি টাকার অর্ধেক টাকা নিয়ে শিমুল ভূঁইয়াকে দেওয়ার কথা ছিল বাবুর।
সূত্র বলছে, শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি এবং খুনিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসে আছে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত। এ হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়েই আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে।
২৯ মের মধ্যে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডিজিটাল ডিভাইস ও ডিজিটাল এভিডেন্স বিশ্লেষণ করে আনার হত্যার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পায় ডিবি। শিমুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে ৬ মে তারা আরেকজন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। সেখানে অর্থের লেনদেনের কথা বলেন ওই নেতা, যার পরিমাণ দুই কোটি। এর মধ্যে খুনিরা দেশে ফেরার পরে দেবে ২০ লাখ টাকা। আর এক কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবে ২৬ থেকে ২৯ মের মধ্যে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিজ জেলার একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করার মতো রোমহর্ষক ঘটনার ক্লু পেয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাননি সাইদুল করিম মিন্টু। ওই সময় আনারের পরিবারের সদস্যরা নানা জায়গায় আনারকে খোঁজাখুঁজি করেছিলেন। যখন অনেকেই জানতেন আনার হয়তো নিখোঁজ, তখন মিন্টু নিশ্চিত হন আনারকে হত্যা করা হয়েছে।
শাহীনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন মিন্টু
মিন্টুর রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, এমপি আনার হত্যায় সরাসরি জড়িত গ্রেফতার শিমুল আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা আছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্তে মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন আসামি মিন্টুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন।
আনার হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় ২২ মে। তবে এমপি আনার হত্যার ছবি মিন্টু ১৬ মে দেখেছেন। তাহলে মিন্টু এত আগে জেনেও কেন গোপন করলেন। মিন্টু কয়েকবার ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে এমপি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় টাকা-পয়সার ইস্যুও আসামিদের জবানবন্দিতে এসেছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আগেও আনারকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল
এমপি আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিদের সঙ্গে আমার বাবার ব্যবসার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ডিবি আমাকে জানিয়েছে, গ্রেফতাররা প্রফেশনাল কিলার। পাঁচ কোটি টাকার কন্ট্রাক্টে বাবাকে হত্যা করা হয় বলে তারা বলেছেন। কেন মারতে বলা হয়েছে তারা নাকি জানেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগেও বাবাকে হত্যা করার চেষ্টা করে তারা, তবে পারেনি। তিনবার চেষ্টা করেছিল বাবাকে হত্যার জন্য। আগে থেকেই সবকিছু পরিকল্পনা করে বাবাকে হত্যা করা হয়। এটা রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে। কারণ নির্বাচনের আগে থেকেই মারার চেষ্টা হয়। অনেক শত্রুই তার আছে।’
হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনকে চিনতেন কি না? এ প্রসঙ্গে ডরিন বলেন, ‘শাহীনকে ওভাবে চিনতাম না। শাহীনকে কেউ টাকা দিয়ে এ কাজ করিয়েছে কি না দেখা দরকার। তাকে হয়তো ১০ কোটি টাকা দিয়ে বলেছে তুমি পাঁচ কোটি রাখো আর পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে মেরে ফেলো। শাহীন দ্বিতীয় ম্যান হিসেবে কাজ করলেও করতে পারে। কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগেও বাবাকে মারার জন্য ঢাকায় চেষ্টা করা হয়েছে; তবে মেলাতে পারেনি। এই হত্যার সঙ্গে রাজনৈতিক ভূমিকা থাকতেও পারে। শাহীনকে আইনের আওতায় আনা গেলে সবকিছু পানির মতো বের হয়ে আসবে।’
শাহীনের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিমকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ডরিন বলেন, ‘শাহীনের ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়রকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। শাহীনকে তার ভাই কেন শেল্টার দিয়েছে? আমার এখন অনেক কিছুই মনে হচ্ছে।’
অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে তদবির হচ্ছে
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার বিচার কোনো চাপে যেন বন্ধ না হয়- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে সেই দাবি জানিয়েছেন মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গত ১২ জুন বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
ডরিন বলেন, ‘আমি শুনেছি, অপরাধীদের বাঁচাতে অনেক জায়গা থেকে তদবির করা হচ্ছে। অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে তদবির হচ্ছে, বড় বড় জায়গার ফোন আসছে তাদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়, সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো তদবিরের চাপে পড়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে বন্ধ করার চেষ্টা না হয়, চাপের মুখে যাতে সঠিক তদন্ত বন্ধ করা না হয়, সেই দাবি জানিয়েছি। আমি সঠিক বিচার চাই।’
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান গত ১৫ জুন ডিএমপি সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় মামলার তদন্তকাজ স্বাধীনভাবে এগিয়ে নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। তদন্তে কারও হস্তক্ষেপ বা কোনো চাপ নেই। আনার খুন নিয়ে ডিএমপি/চাপ নেই, পুলিশকে স্বাধীনভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাধীনভাবে আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
যা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এমপি আনার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে গত ১১ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সময় বলা হয়েছিল তিনি চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমপি আনার, তা আমরা কখনোই বলিনি। এমপি আনার চোরাচালানে যুক্ত ছিল, কখনোই বলিনি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমরা সব সময় বলে আসছি এমপির ওই এলাকা সন্ত্রাসপূর্ণ একটি এলাকা। ওখানে সত্যিকারে কী হয়েছে সেটা আমাদের জানতে হবে। আমরা তদন্ত করছি, তদন্তের পরে সব কিছু জানাবো।’
এমপি আনারের মেয়ে ডরিন সন্দেহভাজনদের নাম বলেছেন। কাদের নাম বলেছেন তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন তদন্ত চলে তখন আমাদের মন্ত্রী, আইজিপি কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তদন্ত না করে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি তদন্ত শেষ হলে এগুলো নিয়ে কথা বলবো।’
যা বলছেন ডিবিপ্রধান
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কি না তা তদন্তে বের করা হবে। তদন্তে সুস্পষ্ট অভিযোগ না পেলে আমরা কাউকে আটক করি না।’
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই নিখোঁজ আনার। পাঁচদিন পরে ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপর ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ।
অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে জানা যায়, হত্যার পর টুকরো টুকরো করা হয় এমপি আনারের নিথর দেহ। এরপর মাংসের টুকরো ফেলা হয় সঞ্জীবা গার্ডেনসের কমোডের ভেতর এবং পার্শ্ববর্তী বাগজোলা খালে ফেলা হয় হাড়গুলো।
২৮ মে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। পরে জানা যায় মাংসের টুকরোগুলো মানুষের। তবে সেটি এমপি আনারেরই কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। এরপর ৯ জুন কলকাতার বাগজোলা খালে অভিযান চালিয়ে কিছু হাড় উদ্ধার করে কলকাতার সিআইডি। সঙ্গে ছিল পুলিশ ও নৌবাহিনীর ডিএমজি টিম। তবে হাড়গুলো এমপি আনারের কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এমপি আনারকে হত্যার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছে ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সহযোগী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিমুলের ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া, শাহীনের কথিত বান্ধবী সিলিস্তি রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছে কসাই জিহাদ হাওলাদার ও মো. সিয়াম হোসেন। এদের মধ্যে শিমুল, তানভীর ও জিহাদের গ্রামের বাড়ি খুলনায়। সিলিস্তির গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে ও সিয়ামের বাড়ি ভোলা জেলায়।
সূত্র: জাগো নিউজ
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]