এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল ফিতরের জামাত। প্রখর রোদ আর তাপপ্রবাহের মধ্যেও একসঙ্গে ৬ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে দাবি আয়োজকদের।
শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকেই মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন এ ঈদগাহে। ঠিক ৯টায় শুরু হয় নামাজ। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা। এখানে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহসহ প্রধানমন্ত্রী জন্য শান্তি কামনা করে করা হয় মোনাজাত।
বৃহৎ এ জামাতে অংশ নেন- বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ সর্বস্তরের জনতা।
নামাজ শেষে বৃহৎ এ জামাতের প্রধান উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, একসঙ্গে ৬ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেছেন এ জামাতে। সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ এ জামাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য এরই মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ঈদগাহ মিনার ও ময়দানটি আরও সম্প্রসারণের জন্য দেশি-বিদেশি কনসালটেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় মিনারগুলোর খবরাখবর নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বৃহৎ এ জামাতে অংশ নিতে পেরে খুশি মুসল্লিরা। তারা জানান, এবার ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা অংশ নিতে পেরেছেন। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা।
শুধু দিনাজপুর ও আশপাশের জেলা নয়, এই জামাতে নামাজ আদায় করতে আসেন দূরদূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা। চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত মুসল্লি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান (৬৫) ও স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন (৬৩) জানান, তারা এ জামাতের কথা শুনেছেন। এর আগে তারা শোলাকিয়াতেও নামাজ আদায় করেছেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি।
তারা আরও জানান, এতবড় মাঠ ও এত মুসল্লির সঙ্গে নিয়ে এটাই তাদের প্রথম নামাজ। তারা এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে এবং ব্যবস্থাপনা দেখে খুব খুশি।
এখানে নামাজ আদায় করে একইরকম অনুভূতি প্রকাশ করেন সাড়ে ৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে আসা ফরিদপুরের মো. আমিন (৫৫)। তিনি বলেন, এশিয়ার বড় জামাতের কথা শুনে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছি। এটি আসলেই বৃহৎ জামাত। এ বড় জামাতে নামাজ আদায় করেছি সোয়াবের আশায়। তবে দূরের মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন কিংবা বিশেষ কোনো পরিবহন ব্যবস্থা করলে সহজেই আসা যেত।
বগুড়া থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারণে যানবাহন পেতে সমস্যা হয় দেখে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে নামাজ আদায় করতে আসেন না। যদি প্রতিটি জেলা থেকে বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মুসুল্লি আরও বাড়বে।
বৃহৎ এ জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচাগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান ও ঈদগাহ মিনারটি। সাড়ে ২২ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। কিন্তু মাঝখানে করোনা পরিস্থিতির জন্য দুবছর এ ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়নি ঈদের জামাত।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]