এসিড সারভাইভরা সমাজের বোঝা নয়, তারা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে। এসব সারভাইভররা প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধ জয়লাভ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এসব সারভাইভরা সমাজের মূল স্রোতের সাথে এক কাতারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা বর্তমানে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এখন এসব মানুষের জন্য দরকার সকল প্রকার সহযোগিতা। আমরা যারা সমাজের মূল স্রোতে বসবাস করি তাদের নৈতিক দায়িত্ব এসব সারভাইভরদেও সহযোগিতা করা।
যারা মানুষের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে তারা পশু। তারা সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ না এসিডদগ্ধ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সারাটা জীবন যে কতটা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে সে ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারবে না। চরম নৈতিকতার অভাব হলেই একজন মানুষ আর একজন মানুষকে এসিড ছুড়ে মারে। আমরা চাই না আর একটিও এসিড আক্রান্তের ঘটনা ঘটুক। এসিড আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু এখন ঘুঁরে দাড়িয়েছে। সাতক্ষীরায় সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
(১৪ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্ক, সাতক্ষীরার (এসবিজিএন) উদ্যোগে উন্নয়ন সংগঠন স্বদেশ ও দাতা সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ’র সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এসবিজিএন’র বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে শহরের শহিদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের সদস্যরা র্যালি ও সমাবেশ করেন। সমাবেশ ও র্যালিতে এসিড সারভাইভর নারী-পুরুষ ও শিশুরা অংশগ্রহণ করেন। সাধারণ সভায় জানানো হয়, সাতক্ষীরা জেলায় বর্তমানে ১৬৩ জন এসিড সারভাইভর আছেন। যাদের মধ্যে ১১৫ নারী ও পুরুষ ৪৮ জন। এদের মধ্যে শিশুরাও আছে।
সভায় প্রধান অতিথি নজরুল ইসলাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এসিড সারভাইভররা যে কোনে সাহায্যের জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করলে আমি চেষ্টা করবো তাদেরকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে’। তিনি শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সভায় বক্তারা বলেন, একসময় এসিড আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের মূল স্রোতের মানুষের সাথে মিশতে পারতো না। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তারা নিজেরদেরকে আড়াল করে রাখতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই, তারা ঘুরে দাড়িয়েছে। নিজেরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।
দেশ-বিদেশ থেকে তাদের সেসব উদ্যোগ দেখতে মানুষ আসছে। বর্তমানে এসডি আক্রান্ত শিশুরা লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে। স্বদেশ ও একশনএইড বাংলাদেশ এমটিবি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে কর্মসূচি সাতক্ষীরা বাস্তবায়ন করছে। আশা করা যায় আগামীতে এই কর্মসূচির মাধ্যমে সুবিধাভোগির সংখ্যা বাড়বে।
স্বদেশ’র নিবাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্তের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্ক, সাতক্ষীরার (এসবিজিএন) বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্ক, সাতক্ষীরা’র সাধারণ সম্পাদক সফুরা খাতুন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ, শহর সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিধদপ্তরের প্রতিনিধি আজিজুর রহমান।
অনলাইনে যুক্ত হন একশনএইড-বাংলাদেশ’র ওম্যান রাইটস এন্ড জেন্ডার ইক্যুইটি প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার মৌসুমী বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনে এসিড সারভাইভরদের অর্থনীতিক কর্মকান্ড এবং আগামীতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত অপরাজিতা প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মাল্টিমিডিয়ায় উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা ফারুক রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হেড সংস্থার নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান, নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, জেলা ভুমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
সুপারিশসমূহ:
১. সারভাইভরদের মালিকানায় সমবায়ভিত্তিক যৌথ কৃষি খামার স্থাপন;
২. সারভাইভরদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেতে কার্ড প্রদান;
৩. সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় আনা;
৪. শিক্ষার্থী বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান।
৫. সারভাইভরদের প্রতিবন্ধী কার্ড প্রদান।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]