“এই ভয়ঙ্কর সুন্দর পৃথিবী, বাংলার চির অপরূপ শোভা, রূপসী রাত, সোনালী দিন, এই গ্রাম এই সব মানুষ আমি আর দেখবোনা, আমার হৃদপিণ্ডের শিরা, উপশিরা চর্বির পলি জমে বাংলাদেশের ২৭০টি নদ-নদীর মত মরণ দশা শুরু হয়েছে। ক্ষীণ-শ্রোতা রক্তবাহী নালী গুলি বন্ধ হলেই আমার মরণযাত্রা। শুনব না আযান ধ্বনী নিত্য ভোরে। আচমকা পথ ভুলে বাইবনা জীবণ তরী হৃদয় কূলে কূলে। গাইবনা শব্দ বাক্য গান - বেহায়া এই মন কে শূণ্যে উড়াল দিয়ে এই খানে আর আসব না।”
- কথা গুলি লেখা আছে লেখকের অযাচিত বইয়ের মোড়কের উপর।
লেখকের এই কথা গুলোর মধ্যে এক জন মানুষের জীবণের শেষ আশ্রয়স্থলে চির প্রস্থানের ইঙ্গিত বহন করে। বহন করে এক চিরন্তন সত্যের ধারা, যার কোন দিন কোন কালে ঘটেনি ব্যাত্যয়। ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে আমরা অতিথি মাত্র। সবাই কে একদিন এই পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চের অভিনয় শেষে চির প্রস্থান করতে হবে।
যাক সে কথা, আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর পেশায় একজন ডাক্তার। যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের পূর্ব-দক্ষিনে মোবারাকপুর গ্রামে তার জন্ম। পিতা মরহুম মৌলভী কেরামত আলী গাজী, মাতা মরহুমা আইমানী বিবি। পিতা সামান্য লেখাপড়া জানলেও মা আইমানী বিবি ছিলেন নিরক্ষর গৃহিনী। তার পরও লেখাপড়ার প্রতি তাদের ছিল সীমাহীন ঝোঁক। প্রচন্ড শিক্ষানুরাগী হওয়ার কারনে সন্তান দের লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীরের পথ চলার সেই সাথী আজ আর তার সাথে নেই। একবুক বেদনা নিয়ে চিরবিদায় হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যে সহধর্মীনীর উৎসাহ এবং অনুপ্রেরনায় আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত তাকে হারিয়ে তিনি আজ বিপর্যস্ত। অবশ্য তার লেখা বইয়ের অধিকাংশই উৎসর্গ করেছেন তার প্রিয় সেই হতভাগা মানুষটি নাসিমা খানম কে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীল ছিলেন সবার ছোট। বড় ভাই মোঃ রজব আলী অবসর প্রাপ্ত ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকতা, মেঝ ভাই মোঃ মোজাহার আলী যশোর সন্মিলনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। সেঝ ভাই মোঃ আব্দুল বারী রাজগঞ্জ বাজারের এক সময়কার নামকরা ব্যাবসায়ী। এবং এক মাত্র বোন মোছাঃ আনোয়ারা খাতুন কৃষ্ণবাটী গ্রামের মকছেদ আলী গাজীর সহধর্মিনী, একজন গৃহিনী। ১৯৫৭ সালে তার জন্ম। আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর স্থানীয় রাজগঞ্জ বহুমুখী বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এস, এস, সি এবং ১৯৭৫ সালে যশোর সরকারী এম,এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচ, এস সি পাশ করেন। এবং মেডিকেলে রাষ্ট্রীয় ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর তার চিকিৎসা পেশায়ও অর্জন করেছেন খ্যাতি। সুনাম ও কুড়িয়েছেন সমান তালে।
বর্তমান তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাতবড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে উপ-সহ কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় বছর হতে চল্ল সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেছেন। নিজ কমর্স্থল এলাকায় এত বেশী জনপ্রিয় ছিলেন যে চাকুরী জীবণের প্রায় সারাটি সময় তিনি সাতবাড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে কাটিয়েছেন। একবার তাকে বদলী করা হয়েছিল তখন এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বণীতা এক যোগে আন্দোলন করে এবং সরকারের উপর মহলে দেনদরবার করে মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছিল। জনপ্রিয় এই ডাক্তারের অভাব এখনও চরম ভাবে উপলব্ধি করে ইউনিয়নের মানুষ। আজ পাড়াগায়ে জন্ম গ্রহন করেও তিনি সাহিত্য চর্চায় ছিলেন অতিমাত্রায় ব্রত। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭। তার উল্লেখ যোগ্য গ্রন্থ হল, ১। চলার পথে, ২। মৃত্যুর সমুদ্র শেষ, ৩। গল্পে মধুসূদন, ৪। একটু গেলে বুনোপথ, ৫। রেখ মা দাসেরে মনে, ৬। রজনীগন্ধা বনে ঝড়, ৭। নিষিদ্ধ সৌরভ, ৮। বিনষ্ট সংলাপ, ৯। চির জনম হে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]