করোনা ভাইরাসের বহুল প্রতিক্ষিত টিকা বিশ্বের ৫৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে টিকা পৌঁছে গেছে। করোনা ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি, চিকিৎসার ওষুধ ও টিকা, পার্শ্ব বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া, ইত্যাদি নিয়ে মানুষের মনে নানা কৌতূহল ও সন্দেহের উদ্রেক শুরু হয়েছে; যা খুবই স্বাভাবিক। কারণ এই ভাইরাসটি পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত আসা অণুজীবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে এবং এর কোন চিকিৎসা পদ্ধতিও জানা ছিল না।
গত বছরের ২৫ মার্চ দেশ লকডাউনের পর থেকে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ছিলো। দেশে করোনার অল্প বিস্তারের সময় এলাকা ভিত্তিক লকডাউন, স্প্রে ছিটানো, হাট-বাজারে শারিরীক দুরত্ব স্থাপন, কাঁচা বাজার খোলা মাঠে নেয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়ের্ছিলো। কিন্তু যখন করোনার বেশি বিস্তার তখন এই উদ্যোগগুলো নেয়া হয়নি। মূলত মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক দূর হয়েছে করোনা নিয়ে। মুখে সচেতন থাকলেও কার্যক্ষেত্রে কতজন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন? দেশে করোনায় মৃত্যুর মিছিল বাড়লেও মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক নেই, নেই প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। সরকার মৃত্যু ও সংক্রামণ ঠেকাতে টিকা দানের বিশাল এক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে; কিন্তু মানুষের আগ্রহ কম। অন্যদিকে, করোনার টিকা বিতর্কিত করতে মাঠে নেমেছে একটি কুচক্রী মহল।
সত্যকে দীর্ঘদিন চাপা দিয়ে রাখা যায় না। প্রতিদিন যেভাবে বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে, তাতে তো বিজ্ঞানীরা সব ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। মানুষকে বাঁচাতে হলে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে, প্রতিরোধের জন্য টিকা বের করতে হবে, প্রতিরোধের জন্য আবশ্যকীয় স্বাস্থ্য বিধিগুলো মানতে হবে। এতদিন টিকা ছিল না, টিকা পেয়েছি, যা কাজে লাগাতে হবে। ভারত থেকে আসা টিকাকে ঘিরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা ধরনের সংশয়ের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এমন দাবিও জানানো হয়েছিল, সংশয় দূর করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর উচিত প্রথম টিকা নেয়া। আবার সেই সঙ্গে বিপরীতমুখী কথাও বলা হয়েছে যে, দেশের নাগরিকদের বাদ দিয়ে আগে প্রধানমন্ত্রীর টিকা নিলে সেটা কতটুকু সমীচীন হবে। নিন্দুকের সমালোচনার ভয় নানা কাজে আমাদের বাধা দেয়। এমনকি নিন্দুকের ভয়ে আমরা আর্তের পাশে দাঁড়াতে গিয়েও উপেক্ষা করে চলে যায়; মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে ব্যর্থ হই। কারণ, লোকে কী মনে করবে, কী ভাববে এ কথা ভেবে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি অথচ অপরের মঙ্গলের জন্য কাজ করার ইচ্ছা প্রত্যেক মানুষের মনেই থাকে এবং তার ফলে মহৎ কাজে ইচ্ছুক মানুষের মনে বোদ্ধাদের মতো অসংখ্য শুভবুদ্ধির উদয় হয়।
মানুষের সমালোচনার ভয়ে আমরা ভীত ও লজ্জিত থাকি বলেই কোন কাজ করতে পারি না। টিকার নেতিবাচক প্রচার ও প্রসারের কারণে মানুষের টিকা নেয়ার আগ্রহ কম। মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে আরো বেশি সংবাদ প্রচার করতে হবে দেশের সকল প্রচার মাধ্যমে। দেশের সাধারণ মানুষ আস্থাহীনতায় আছে, তাই প্রথমেই আস্থা ফিরাতে হবে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের টিকা গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। টিকা নিতে হবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের র্শীষ ব্যক্তিবর্গের। এজন্য সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরো মিডিয়া মূখী হতে হবে। টিকা নিলে কতদিনে এন্টিবডি তৈরি হবে, দীর্ঘ মেয়াদী সুবিধা-অসুবিধা সাধারণ মানুষের মধ্যে সুন্দর ও সাবলিল ভাবে উপস্থাপনা করতে হবে। কুচক্রী মহলের সকল অপপ্রচারের বিজ্ঞান সম্মত জবাব দিতে হবে। কুচক্রী মহলের সকল বিষবাষ্প ছিন্ন করে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে দেশ অচিরেই করোনামুক্ত হবে এমন প্রত্যাশা করি।
লেখক:
নাজমুল হক,
আহবায়ক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]