সারাবিশ্বেই এক রকম তান্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। কিন্তু এই মুহূর্তে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্থ দেশটি হচ্ছে ভারত। অক্সিজেনের অভাব, হাসপাতালে বেডের অভাব, ওষুধের সঙ্কট সবমিলিয়ে যেন দিশেহারা অবস্থা। আমাদের দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম রোগী সনাক্তের ঘোষণা আসে। ১৯ মার্চ প্রথম কোন রোগী মারা যান। প্রথমে এলাকাভিত্তিক লক ডাউন করা হলেও পরে পুরো দেশ লক ডাউন করে দেয়া হয়।
দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো, লিফলেট বিতরণ, জীবানুনাশক ট্যানেল, হ্যান্ড মেশিনে স্প্রে ছিটানো, মাইকিং করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তঃজেলা-উপজেলা চলাচল নিয়ন্ত্রণও করা হয়েছিলো। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জনগণকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার এবং পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারান্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বাঁশ দিয়ে লকডাউন করা হয়েছিলো। নামানো হয়েছিলো সেনাবাহিনী পর্যন্ত। দিনরাত কাজ করেছে প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও। সামাজিক, সংস্কৃতিক সংগঠনসহ ব্যক্তি উদ্যোগেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।
করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশেও বর্তমানে সংক্রামন ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধই আছে, ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন ছাড়া চলছে পূর্বের মতোই। করোনার প্রথম সংক্রামনে দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সচেতন করতে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছিলো। কাজ করতে গিয়ে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে যখন বেশি সংক্রামন হচ্ছে তখন সেই সময়ের উদ্যোগগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে সেইসব উদ্যোগ। ২০২০ সালে লকডাউনে যখন মানুষ ঘরে ছিলো একজন মহিলা সংস্কৃতিক কর্মীকেও দেখা গেছে জীবানুনাশক স্প্রে করতে, কিন্তু এখন কোথায়? বর্তমানে নেই স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎপরতা, জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো কার্যক্রম, দোকানে গোল চিহ্ন, আন্তঃজেলা-উপজেলা চলাচল নিয়ন্ত্রণ, মেবাইল এ্যাপস। করোনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ বেশি আক্রান্ত হলেও সেখানে নেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তৎপরতা। নেই রেড জোন চিহ্নিত করা। ঢাকায় কঠোর লকডাউনেও ট্রাফিক পুলিশকে যানজট নিরাসনে কাজ করতে হচ্ছে। লকডাউনে অফিস-আদালত বন্ধ করে মানুষকে নিশ্চিন্তে শপিং করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
করোনার শুরুতে মানুষ শারিরীক দুরত্ব মেনেই নিত্য কাজ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নেয়া উদ্যোগ আজ হারিয়ে গেছে। তারাও আজ হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। অবশ্য এরই মাঝে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, পৌরসভার নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদের (কিছু অংশ) নির্বাচন হয়ে গেছে। ফলে জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক দায় কিছুটা হলেও তো কমেছে বৈকি? প্রথম ঢেউয়ের সময়ে নেয়া তাদের উদ্যোগগুলো লোক দেখানো ছিলো? যা মিডিয়ায় প্রচার করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করা? প্রচার মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে করোনা হৃদয় বিদায়ক হাহাকার। স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে উঠছে। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, জীবনের জন্য আজ বড়ই প্রয়োজন সেই সময়ের উদ্যোগগুলো আরো একবার। করোনা মুক্ত হয়ে হাসাপাতালগুলো দ্রæত ফাঁকা হবে এমন এমন ছন্দের বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি।
লেখক: নাজমুল হক, আহবায়ক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]