সানবীম করিম সিয়াম: দীর্ঘদিন গ্রাহকদের দুই কোটির বেশি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া ‘ম্যাসেঞ্জার’ নামের একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে আটকালো সংক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে সাতক্ষীরার কলারোয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও আটকে থাকা কর্মকর্তার কথায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই প্রতিষ্ঠানটি ১৫% সুদে লোন দিয়েছে, অথচ ডিপোজিট রাখা গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিলো ১৮% হারে। ৩% কোথা থেকে আসবে সেটার সদুত্তর আটকে থাকা কর্মকর্তা দিতে পারেননি। আবার শতাধিক গ্রাহকের ২ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
দীর্ঘদিন তাদের না পেয়ে দিশেহারা ছিলো ভূক্তভোগি গ্রাহকরা। ইতোমধ্যে টাকার অভাবে দুইজন গ্রাহক মৃতুবরণ করেছেন। অনেকে এখন নি:শ্বপ্রায়। কারো কারো অন্যের কাছে হাত পেতেও চলতে হয়। কেউকেউ সর্বস্ব হারিয়ে দিনমজুরের কাজ করেন। এমন অবস্থায় হঠাৎ মঙ্গলবার টাকা আত্মসাতকারী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুকে পেয়ে তাকে আটকে রেখে বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দকে খবর দেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক জানান, বছর কয়েক আগে কলারোয়া থানার সামনে চৌধুরী মার্কেটে ‘ম্যাসেঞ্জার’ নামের একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিলো। সেখানকার কর্মকর্তারা ডিপোজিট রাখলে অনেক বেশি মুনাফা দিবে বলে অনেক সাধারণ মানুষ ও ব্যবাসয়ীদের জানান। বেশি মুনাফার প্রলোভনে পড়ে গ্রাহকরা তাদের বিপুল অংকের টাকা ‘ম্যাসেঞ্জার’ নামের ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট করেছিলো। কিন্তু প্রায় বছর তিনেক আগে হঠাৎ কয়েক শতাধিক গ্রাহকের ২ কোটির বেশি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় ‘ম্যাসেঞ্জার’ এর কর্মকর্তারা। তাদের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না। আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে জানতে পারি ‘ম্যাসেঞ্জার’ এর কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বাবু কলারোয়ায় এসেছে জমি রেজিস্ট্রি করতে। তখন আমরা কয়েকজন ভূক্তভোগি গ্রাহক রেজিস্ট্রি অফিসে এসে তাকে আটকায়।
তাৎক্ষনিক সেখানে উপস্থিত পৌরসদরের গদখালী গ্রামের তাজামুল ইসলাম জানান- তার ১৬ লাখ টাকা জমা ছিলো, একই গ্রামের আলাউদ্দীন জানান- তার ৩লাখ ৭০ হাজার টাকা, টাকা জমা দেয়া চায়না মারা গেছেন, তার স্বামী লাল্টু জানান- তার স্ত্রীর ২ লাখ ৫০হাজার টাকা, হাফিজুল ইসলাম জানান- তার ৫লাখ ৫০হাজার টাকা, আনিছুর রহমান জানান- তার ২ লাখ টাকা, আকলিমা খাতুন জানান- তার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মুরারীকাটি গ্রামের ইমামুল হোসেন জানান- তার ৩ লাখ টাকা, শুভংকরকাটি গ্রামের জাকির হোসেন জানান- তার ৫লাখ ৫০ হাজার টাকা, ফিরোজা খাতুন জানান- তার ৩ লাখ ৭০হাজার টাকা জমা ছিলো। কিন্তু লভ্যাংশ তো দূরের কথা পুরো টাকা মেরে দিয়ে কোম্পানিটি চম্পট দিয়েছে।
তারা আরো জানান, শেষ সম্বলটুকুর বিলীন করে লাভের আশায় টাকা জমা দিয়েছিলেন ‘ম্যাসেঞ্জার’ প্রতিষ্ঠানে। ইতোমধ্যে টাকার অভাবে চায়না খাতুনসহ দুইজন গ্রাহক মারা গেছেন।
সেখানে আটকে থাকা ‘ম্যাসেঞ্জার’ নামের ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বেলি গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ মোল্যার পুত্র কামরুজ্জামান বাবু জানান- তারা কয়েকজন মিলে প্রতিষ্ঠানটি চালাতেন। তাদের মধ্যে দুু’জন বিদেশে চলে গেছে। গ্রাহকদের চাপে দুই বছর ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আজ এসেছিলেন নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিক্রয় করা একটি জমি রেজিস্ট্রি করতে।
তিনি আরো জানান- গ্রাহক ছিলো ১৩শ’র মতো। ডিপোজিট গ্রাহক ছিলো ৮০জন। ফিল্ডে লোন দেয়া ছিলো ২ কোটি ৪লাখ আর ডিপোজিট রাখা ছিলো ১ কোটি ৭৫লাখ টাকা। আমরাও অনেক লোন নেয়া গ্রাহকের কাছে টাকা পাবো। দুই বছর বাড়ি ছাড়া, সামনে সময় দিলে টাকা পরিশোধ করা হবে।
খবর পেয়ে কলারোয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মীর রফিকুল ইসলাম ও দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী বাবু সেখানে উপস্থিত হন।
তারা জানান- আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অতিসত্বর তাদের টাকা পরিশোধের জন্য দাবি জানান।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]