জুলফিকার আলী,কলারোয়াঃ কলারোয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানি ফলের চাষ। জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায় এ ফলটি। অল্প খরচ করে অধিক ফলন। লাভজনক হওয়ায় পানি ফলের চাষে ঝুঁকছে এখানকার মানুষ। পানি সিঙ্গারা অনেকই চিনেন এখন পানি ফল হিসেবে। পানি ফল দেখতে খানিকটা বাজারের তৈরি সিঙ্গারার মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন।
তাছাড়াও এ ফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য জমি পতিত না রেখে পানি ফলের চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুভ্রাংশু শেখর দাস বলছেন, পানিফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ ফলের পুষ্টিরমানও অনেক বেশি।
কলারোয়া উপজেলার পতিত জমিতে এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে এখানকার মানুষ। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে প্রতিটি গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘা জমি চাষে ৯/১০হাজার টাকা খরচ করে ৩৫/৪০ হাজার টাকা লাভ করে চাষিরা।
উপজেলায় এবার ৩৭ হেক্টর পতিত জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। প্রথমে দাম ছিলো ৪০/৫০ টাকা কেজিতে। এখন একটু কমে গেছে। এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে উপজেলার অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার। কলারোয়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই পানি ফলের চাষ শুরু হয়। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই পানিফল চাষে অনেক আগ্রহী হয়েছেন।
উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরাও অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করছে। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ পানিফল। এই ফলের গাছটি ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নীচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। আশ্চর্য বিষয় হলো-এই গাছে ফুল ফোটে ভোর বেলায়, পানির উপর ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু ফুল ফোটার কিছুক্ষণ পরে সেই ফুল পানির নিচে চলে যায়। আর সেখানেই পানি ফলে পরিণত হয়।
পানি ফল চাষী রেজাউল ইসলাম ও আবু হাসান বলেন, ১৩বছর ধরে তারা কলারোয়া পৌর সদরের গোপিনাথপুরে পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে আসছেন। পানি ফলে সার কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচর্যাও কম। অল্পপুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশী। খেতেও সুস্বাদু। এ বছর তাদের ৬বিঘা জমিতে পানিফল চাষের খরচ হয়েছে প্রায় ৭০হাজার টাকা। এতিমধ্যে পানি ফল বিক্রয় শুরু হয়েছে। আষাড় মাসে পানি ফলের চাষ শুরু হয়। এর তিন মাস পরে গাছে ফল আসে। তারা আরো বলেন-অন্যান্য ফসলের থেকে লাভও দ্বিগুণ। এই ফল চাষে বর্তমানে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আমাদের কলারোয়ায় বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক হতদরিদ্র মানুষ। পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারি। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে।
পানি ফল চাষী অজেদ আলী, আব্দুল মাজেদ, শিল্পী, একুব্বার, শফিকুল ইসলাম, মুনসুর আলী, নাজির গাজী, শামসুর রহমান, আব্দুর রউফ, রফিকুল ইসলাম, সোহাগ হোসেন, আবুল হোসেন, নুর ইসলাম, তৌহিদ, পফ্ফার, মোস্ত জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরো অনেক মানুষ পানিফল চাষ করতে পারতো। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে। কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুভ্রাংশু শেখর দাস বলেন, বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোন পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। চলিত বছরের ৩৭হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে চাষ হবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]