এস এম ফারুক হোসেন: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো এবার শীতকালীন আইস বক্স জাতের বা মেসির তরমুজ চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কামরুল হাসান নামে এক কৃষক। এতে অনেক কৃষকই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র অনুযায়ী- কলারোয়া উপজেলা গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে এ অঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি উপযোগী।
দেশের অন্যান্য জেলায় স্বাভাবিকভাবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম পর্যন্ত তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কিন্তু এবার কলারোয়ায় সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখে শীতকালীন আইস বক্স বারো মাসী তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় এবার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের একজন কৃষক ৬৬ শতাংশ জমিতে আইসবক্স জাতের বারমাসি তরমুজ চাষ করেছেন।
কলারোয়া উপজেলার সীমান্ত ঘেষা চন্দনপুর ইউনিয়নের চন্দনপুর উত্তর মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাল চিং পেপারের বেডের উপর হলুদ ও সবুজ রঙের শীতকালীন তরমুজ।
কলারোয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো শীতকালীন তরমুজ চাষ করা চন্দনপুর গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান (৪৮) শীতকালীন তরমুজ চাষের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি প্রতিবছর বেগুন, পটোল, ঢ্যাঁড়সসহ অন্যান্য শাকসবজির আবাদ করি। এই বছর প্রথম ৬৬ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন এ আর মালিক প্রাইভেট লিমিটেডের এফ ১ হাইব্রিড তরমুজ মার্সেলো বারোমাসি আইস বক্স তরমুজের আবাদ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। দুই বিঘা তরমুজ চাষ করতে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকার মতো। বিক্রয় হতে পারে ২ লাখের উপরে। শীতকালীন তরমুজ চাষ আমি একা করার কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রয় করতে পারলে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের ন্যায় বেশী লাভবান হবো।
তিনি আরো বলেন, আমার খেতের তরমুজ দেখার জন্য দূরদূরান্তের মানুষ প্রতিদিন আসেন। আমার দেখাদেখি আশপাশের মানুষ তরমুজ আবাদ করতে চান। তরমুজগুলো আরেক সপ্তাহের মধ্যে ভালো ভাবে বিক্রি করা যাবে। তরমুজগুলোর রং ও স্বাদ ভালো হয়েছে।’
একই গ্রামের কৃষক মো. কুদ্দুস (৬০) বলেন, আমরা তো বেগুন, পটোল, কুমড়া, ধান, পাট সবে আবাদ করি। কিন্তু এইবার কামরুল হাসান শীতকালীন তরমুজ চাষ করে আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মিষ্টিকুমড়া, পটোল, বেগুন এগুলার দাম কম। তরমুজের দাম সব সময় বেশি।
চন্দনপুর ওর্য়াডের ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তরমুজ আমার এলাকাতে নয়া ফসল। এই মাটিত তরমুজ আবাদের কথা আগে আমরা চিন্তাও করি নাই। কামরুল হাসানের তরমুজ বাগান দেখার জন্য বাইরের মানুষ আসছে। আবাদের নিয়মকানুন জানছে। পরিশ্রম করিতে পারলে নয়া ফসল হিসাবে তরমুজ আবাদ করে লাভ করা যাবে।’
চন্দনপুর ইউনিয়নের সহ-উপসহকারী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমাদের তিনটি ব্লকে ১ জন কৃষক ৬৬ শতাংশ জমিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক শীতকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। আইস বক্স জাতের। ব্লকে ফলন ভালো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওই সব তরমুজ বাজারজাত করা যাবে। বর্তমানে বাজারে ওই তরমুজ সর্বনিম্ন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে এক বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করা যাবে দুই লাখ টাকার ওপরে। কৃষকদের তরমুজবাগান দেখে আশপাশের কৃষকেরাও তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আশা করছি ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে শীতকালীন তরমুজের চাষ বাড়বে।’
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাস বলেন, শীতকালীন তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল। এ অঞ্চলে বেলে দো-আঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। আমরা প্রথমবারের মতো এর চাষ করে সফলতা দেখছি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]