দেলোয়ার হোসেন, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) থেকে: আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, ধুতুর, ধুতুর, ধুতুর ধুর সানাই বাজিয়ে,যাব তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে’ সাতক্ষীরার কলারোয়াতে এক সময়ের গ্রামীণ জনপদে চলাচলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত ঐতিহ্য‘গরুর গাড়ি’নিয়ে রচিত গানে প্রমাণ মিলে জনপ্রিয়তার।
সভ্যতার প্রায় উন্মেষকাল থেকেই বাংলাদেশের সবর্ত্রই যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যান হিসেবে পরিচিত ছিল‘গরুর গাড়ি’।কিন্তু আধুনিক সভ্যতার বিবর্তনের মেশিনারি যন্ত্রচালিত লাঙল বা পাওয়ার টিলার এবং নানা যন্ত্রযানের তৈরির ফলে বিলুপ্ত ‘গরুর গাড়ি’।
তবে এখনও গরুর গাড়ির ঐতিহ্য টিকে রয়েছে নানারকম লোকসংস্কৃতি ও তাকে ভিত্তি করে নানা মেলা-অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে। দুই চাকা বিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার বিশেষ যান গরুর গাড়ি। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সঙ্গে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সঙ্গে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। দুটি গরু দিয়ে দৈনিক এক থেকে দুই বিঘা জমি চাষ করা যেতে পারে।
সূত্রে জানা যায়, গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টজন্মের প্রায় (১৬০০) বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন প্রভাব ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে, গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য,আজ তা প্রায় বিলুপ্তির মুহূর্তে।
কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে সাতক্ষীরা কলারোয়ায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই অতীতের প্রতি ছবির মতন। গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। তাই এমন এক দৃশ্য দেখা গেছে,অতীত সেই বাহন।
সোনাবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইছাক মোড়লের পুত্র মজিবর মোড়ল (৬৫) দেশের কণ্ঠ প্রতিবেদনে তিনি বলেন, মাত্র প্রায় দুই থেকে আড়াই যুগ আগেও পণ্য পরিবহন হাল চাষ ছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনে বহনের বিকল্প কোনও বাহন কল্পনাই করা যেত না। সময় অতিবাহিত হবার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন-আধুনিকায়ন হয়েছে।আজ শহরের ছেলেমেয়ে দূরে থাক, গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরুর গাড়ির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত না।
তিনি আরো বলেন বর্তমানে আমার পরিবারের তিন সদস্য আছে, আমরা দুজন আর আমার মৃত ছেলের রেখে যাওয়া মেয়ে,তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য আমার এই বয়েসে এই গরুর গাড়ি বহন করে আমার সংসার চালাতে হয়, এবং আমার পরিবারে আর কেউ ইনকামের লোক নাই, যদি এটা বিলুপ্তির পথে যায় তাহলে আমি এই বয়েসে কি করে চলবো। এটা দিয়ে দৈনিক ৫০০/৬০০ টাকা রোজগার হয়, আবার কোন দিন ১৫০০/২০০০ টাকা আয় হয় তাতে করে আমার সুন্দর ভাবে সংসার চলে যায়।বছরে দুই থেকে তিন মাস বাদ দিয়ে বাকি সব সময় চলে এবাহন।আর বর্তমানে আমার এলাকায় এই বাহনটি আর কারোও নাই।
স্থানীয় জমি-জমা অর্থবিদ মতে সরদার বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রকৃতিবান্ধব গরুর গাড়ি বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও কালেভদ্রে দু-একটি গরুর গাড়ির দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুলের মতন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ঐতিহ্যের স্বার্থেই এ বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আছে বলে মনে করি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]