শেখ জিল্লু: কলারোয়ার কোঠাবাড়ি- রায়টা গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি বেত্রবতীর পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। ড্রামের ভেলা ভাসিয়ে চলছে নদী পারপার। কোঠাবাড়ির পাশের গ্রাম শুভঙ্করকাটি ও হেলাতলা অপর পাড়ে রায়টা ও আলাইপুর গ্রাম। বেত্রবতী নদীর তীরে এ গ্রামগুলোর অবস্থান। সাঁকোটির বেহাল দশায় কোমলমতি স্কুল পড়ুয়াসহ বিপুল জনগোষ্ঠী নদী পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। রোববার (৩ নভেম্বর) সরেজমিন ঘটনাস্থলে যেয়ে এ বিরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে। এ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, বেত্রবতীর ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করার। কোঠাবাড়ি গ্রামের ঠিক বিপরীতে নদীতীরবর্তী কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের রায়টা গ্রাম। এই দুই গ্রামকে বিভক্ত করেছে বেত্রবতী। এ নদ বর্তমানে শ্যাওলা-কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে গেছে। নদীর দুপাড়ের মানুষের যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিলো অনিরাপদ একটি বাঁশের সাঁকো। প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ ও ৪ ফুট চওড়া এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ গ্রামের মানুষের যাতায়াত চলে। এই সাঁকো ভেসে যাওয়ায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে নদী পারাপার ব্যবস্থা। নদী তীরবর্তী রায়টা গ্রামে রয়েছে বড় বাজার, স্কুল ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দোকানপাট ও বিপণীকেন্দ্র। হেলাতলা গ্রামের আবু জাফর জানান, রায়টায় সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের দিনগুলোতে কোঠাবাড়ি, হেলাতলা ও শুভঙ্করকাটি গ্রামের মানুষের এই সাঁকো পেরিয়ে রায়টা গ্রামের হাটে যেতে হয়। রায়টা গ্রামের ম্যারেজ রেজিস্টার মাওলানা নুরুল হক জানান, নদীর পশ্চিম পাশের কোঠাবাড়ি ও হেলাতলা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ শাকসবজি আসে রায়টা বাজারে। হঠাৎ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় রায়টার সবজিবাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া কোঠাবাড়ি গ্রামের স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা এই সাঁকো পেরিয়ে রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলে আসতো। সাঁকো ভেঙে পড়ায় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের এখন অনেক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান কালবেলাকে জানান, নদীর বিপরীত পাশের গ্রাম কোঠাবাড়ি থেকে তাঁর স্কুলে প্রায় ৫০/৬০ জনের মতো ছাত্রছাত্রী আসে। এদের সবাইকেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের এই সাঁকো দিয়েই স্কুলে আসতে হয়। এখন সাঁকোটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিশুরা ভীষণ দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। বর্তমান এ অচলাবস্থা কাটাতে রায়টা গ্রামের শেখ সোবহান ড্রাম ব্যবহার করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ভাসমান ভেলা বানিয়েছেন। এই ভেলায় একবারে ৮/১০ জন নদী পার হতে পারছেন। স্কুল শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে এই ড্রামের ভেলায় চড়ে প্রতিদিন স্কুলে আসতে হয়। এ বিষয়ে রোববার বেত্রবতীর তীরে রায়টা অংশে ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে টেকসই সেতু নির্মাণের দাবিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন হেলাতলা গ্রামের আবু জাফর, কোঠাবাড়ি গ্রামের ফিরোজ, আলাইপুর গ্রামের নুরুল খান। কোঠাবাড়ি গ্রামের নুসরাত, তৃষা, মিম, মরিয়ম, ওয়াছিউর এরা সকলেই রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী। তারা জানায়, তাদের সময়মত স্কুলে আসতে ও বাড়ি ফিরতে অনেক কষ্ট হয। একটা সেতু থাকলে খুব ভালো হতো বলে তারা জানায়। এলাকাবাসী জানান, একটি টেকসই কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হলে যানবাহনসহ কোমলমতি শিশু ও মানুষের পারাপার নিরাপদ হতো। এই সাঁকোর উভয় পাড়ের সড়ক কার্পেটিংও করা হয়েছে অনেক আগেই। একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা গেলে বেত্রবতীর দুই তীরের মানুষের বদলে যেতো জীবনযাত্রা। শুরু হতে পারতো এ জনপদের যোগাযোগের এক নবদিগন্তের। এ বিষয়ে হেলতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও কুশোডঙ্গার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ কালবেলাকে জানান, এই বাঁশের সাঁকোর সংস্কার আর এলাকার মানুষ চান না। তারা চান, টেকসই সেতু নির্মাণ করা হোক। তাহলেই হেলাতলার সঙ্গে কয়লা ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে, যা নি:সন্দেহে বদলে দেবে মানুষের জীবনমান।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]