কলারোয়ায় কচুরিপানা দিয়ে বানানো পথে বেত্রবতী নদী পারাপারের দুঃসহ দুর্ভোগ থেকে অবশেষে পরিত্রাণ পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্বস্তি নেমে এসেছে জনমনে। উভয় পাড়ের মানুষের পারাপারের জন্য নতুন করে স্থাপিত লোহার বিকল্প সেতুটি শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বেত্রবতী নদীর বিকল্প সেতু নয়দিন পর নতুন ভাবে সচল হলো।
নতুন এই বিকল্প সেতুটি আগের চেয়ে আরও উঁচু ও টেকসই কাঠামোর বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সেতু পারাপারকারীরা।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেত্রবতীর ক্ষতিগ্রস্ত অপর দুটি কাঠের সাঁকো সংস্কার করতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কলারোয়ার সাথে পৌরসভাসহ উপজেলার উভয়পাশের ১২টি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বেত্রবতীর বিকল্প সেতু।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায় গত বছর আগস্টে বেত্রবতীর প্রধান পাকা সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের মে মাসে পুরানো সেতু ভেঙে ফেলা হয়। এর পাশেই নদী পারাপারের জন্য লোহার বিকল্প সেতু বসানো হয়।
এটাই ছিলো উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মানুষের নদী পারাপারের সহজ ও প্রধান মাধ্যম। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পানির তীব্র স্রোতে একদিনেই ভেসে যায় বিকল্প সেতুটিসহ পৌরসভার ৩টি সেতু। গত নয়দিন ধরে বিপুল সংখ্যক মানুষ নদী পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ মোকাবিলা করেছেন।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নতুন করে স্থাপিত বেত্রবতীর বিকল্প সেতু জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেতুটি সংযোগ সড়কের সমান্তরালে হওয়ায় নদী পারাপার সহজ, নির্বিঘ্ন ও ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। এটি যেমন মজবুত, তেমনি প্রশস্ত।
তবে সেতু স্থাপনের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চাইছে, যেনো কোনো ট্রাক, ফোরহুইলার বাহন সেতুতে চলাচল না করে। তাহলে নতুন এই বিকল্প সেতুটি আরও টেকসই অবস্থায় থাকবে। স্থানীয়রাও তেমনটিই চান বলে জানা যায়।
একটি বিকল্প সেতুর বিকল্প হিসেবে গত নয়দিনে নদী পারপারে নানা উপায় অবলম্বন করতে হয়েছে। কখনো খেয়া পারাপার, কখনো ডুবে যাওয়া সেতুর পাইপ ধরে পারাপার। আবার সবশেষ কচুরিপানা দিয়ে পথ বানিয়ে পারাপার। একটি বিকল্প সেতু স্থাপনের মধ্য দিয়ে অবশেষে সব বিকল্প পথের শনিবার অবসান ঘটলো। তবে মাত্র নয়দিনে এতো বড় মাপের কাজ সম্পন্ন হওয়ার নেপথ্যে উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত এবং সহযোগী সংগঠনের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়।
প্রথমে মানুষের নদী পারাপারের জন্য তাঁরা খেয়া নৌকার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নদীতে জমে থাকা কচুরিপানা দিয়ে পথ বানান। কচুরিপানার পথেই চলে গত আটদিনের নদী পারাপার। সওজ নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে দফায় দফায যোগাযোগ করেন উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। যার ফলশ্রুতিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ বেত্রবতী বিকল্প সেতুটি আলোর মুখ দেখলো। তীব্র দুর্ভোগের পর নতুন বিকল্প সেতু স্থাপনে স্বস্তি ফিরেছে ভুক্তভোগীদের মাঝে। তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত মানসিকতা থাকার প্রয়োজন বলে মনে করেন বেত্রবতীর উভয় তীরের মানুষ।
বেত্রবতী সংলগ্ন মির্জাপুর গ্রামের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হাসান কামরুল, ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন রফু, ফজলুল হক লাকু, মুরারিকাটি গ্রামের তারিকুল ইসলাম, শিক্ষক প্রদীপ কুমার, আলাইপুর গ্রামের ব্যবসায়ী শেখ রবিউল ইসলাম, সরোয়ার হোসেন, কলারোয়া পৌর শহরের শিক্ষক উৎপল সাহাসহ সচেতন ব্যক্তিবর্গ জানান, নতুন এই সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা দরকার। চারচাকার যানবাহন চলাচল করলে ফের ক্ষতিগ্রস্ত হবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্মিত বিকল্প সেতুটি। তাই এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বেত্রবতী নদীর ৩টি সেতু-সাঁকো পানির তোড়ে ভেসে যায়। ফলে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]