এস এম ফারুক হোসেন: উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশা ও বরফের মত ঠাণ্ডার পানি উপেক্ষা করে ধানের জেলা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় পুরোদমে ইরি-বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষককেরা। ভোর হতেই শীতল বরফের মত ঠাণ্ডা পানিতে নেমে বোরো ধানের বীজ তোলা আর সেই বীজ তোলে জমিতে সারি সারি ভাবে রোপণ করছেন কৃষককেরা। পাশাপাশি চলছে বোরো চাষের জন্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে জমি। ভোর রাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বোরো জমি প্রস্তুত করতে হাল চাষ করছেন কৃষক।
আগাম জাতের ইরি বোরো ধানের বীজ রোপণের হিড়িক পড়েছে। তাই ইরি-বোরো রোপণ নিয়ে যেন চলছে গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ। ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক-কৃষাণিদের। এবার অন্য বছরের তুলনায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় তিনগুণ বেশি জমিতে ইরি বোরো ধান চাষ হবে। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এ বছর আমন ধানের দাম কম পাওয়ায় ইরি বোরো ধানের আবাদ বেশি হবে।
কলারোয়া উপজেলাতে ইরি বোরো ধানের মধ্যে হাইব্রিড ও উফসী জাতের ধান বেশি আবাদ হয়। এছাড়াও ব্রিধান-৮৮,ব্রিধান -৬৩, ব্রিধান -১০০(বঙ্গবন্ধু), শুভলতা,তেজগোল্ড,এস,এল,৮ এইচ,ব্রি: ২৮ সহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষ হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ঘনকুয়াশা ঢাকা ভোর। বাড়ি সংলগ্ন জমিতে ধানের চারা তুলছেন অনেক কৃষক। পুরুষেরা বস্তার মধ্যে কেউবা ভার-বাকুয়ায় করে ধানের চারা নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন। কেউ চাষ দেয়া জমির ঘাস পরিষ্কার করছেন। পরিষ্কার শেষে সারিতে লাগানো হচ্ছে ধানের চারা। হালকা হিমেল বাতাসে দুলছে সদ্য লাগানো ধানের চারা। দোল খাওয়া ধানের চারায় কৃষক দেখছেন আগামীর রঙিন স্বপ্ন। চারা বড় হবে, ফসলে ভরে উঠবে তার ধানের গোলা।
কৃষকরা বলছেন, আগাম চারারোপণ করায় ক্ষেতে ফসল ভালো উৎপাদন হয়। আর সারি সারি করে রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্থি মিলে। এছাড়াও ক্ষেতে রোগ বালাই কম হওয়ায় অন্যান্য ফসল থেকে শতকরা ২০ ভাগ উৎপাদন বেশি হয়।
চন্দনপুর গ্রামের কৃষক কুদ্দুস সরদার জানান, এই ফসল দিয়ে পরিবারের খাবারের যোগান দিতে হয়। তাই বোরো মৌসুম এলে সময় মতো রান্না, খাবারের কথা ভুলে যেতে হয়। শুকনো খাবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে ভোরে কাজে নামতে হয়। পরিবারের নারীরা শ্রমিকদের সাহায্য করতে মাঠে যান।
এই উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের কাঁদপুর গ্রামের বাবু মোড়ল জানান, বীজ, সার সবকিছুর দাম বেশি। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। সার ও বীজের দাম সহনীয় হলে ধান চাষ করে আরো লাভ পাওয়া যেত। তবে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে কারণ আর কয়েকদিন পর সকলেই এক সাথে ইরি বোরো ধানের বীজতলা রোপণ করতে শুরু করলে শ্রমিক সঙ্কটে পড়তে হবে।
সোনাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী জানান, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে সময় মতো চারা রোপণ করতে না পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না। তাই চারা রোপণ শুরু করেছি।
কৃষিবিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে শীতে বীজ তলার তেমন ক্ষতি না হওয়ায় কৃষকেরা বেশ স্বস্থিতে রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি ইরি বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রংশু শেখর দাস বলেন, এখন বোরো লাগানোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষক-কৃষাণিরা। কোনো সমস্যা না হলে প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড ৪.৮১ মে. টন এবং উচ্চ ফলনশীল ৪.২৪ মে. টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কলারোয়া উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রংশু শেখর দাস বলেন,
কলারোয়া উপজেলাতে এবছর ১২হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এ বছর লক্ষ মাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ বেশি হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]