কে এম আনিছুর রহমান, কলারোয়া (সাতক্ষীরা): সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিশু ওয়ান থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত খাতা বিক্রয়সহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সাংবাদিকদের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিবরণ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলায় ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর প্রি-ক্যাডেট ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ হাজার এবং প্রি-ক্যাডেট ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ২’শ ৩৩ জন। মোট ২৯ হাজার ২’শ ৩৩ জন শিক্ষার্থী শিশু ওয়ান থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত এ উপজেলায় লেখাপড়া করে।
অভিযোগে বলা হয়, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য কলারোয়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিস উপজেলার প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে খাতার উপরে অক্ষর ও শব্দ লেখা সম্বলিত ভিক্টোরি প্রকাশনার বাংলা, ইংরেজি ও গণিত খাতা কেনার নির্দেশনা দেন। এরপর প্রত্যেক স্কুলের শ্রেণী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খাতার উপরে লেখা সম্বলিত ভিক্টোরি প্রকাশনার খাতা কেনার জন্য বলে দেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের ভিক্টোরি প্রকাশনার খাতা কেনার জন্য বললে তারা কলারোয়া বাজারের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখতে পায় জাহাঙ্গীর লাইব্রেরী ছাড়া অন্য কোন বইয়ের দোকানে এসব খাতা বিক্রি হচ্ছে না।
অধিকাংশ অভিভাবকরা তাদের পছন্দের বইয়ের দোকান খাতা কিনতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাধ্যমে শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা জানতে পেরে কলারোয়া বই বিতানসহ কয়েকটি লাইব্রেরীর স্বত্বাধিকারী ভিক্টোরি প্রকাশনা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কলারোয়ার জাহাঙ্গীর লাইব্রেরী ছাড়া অন্য কোন লাইব্রেরীতে বই বিক্রয় করতে রাজি হয়নি। ফলে কলারোয়ার অন্য লাইব্রেরীর স্বত্বাধিকারীরা বাংলা ইংরেজি ও গণিত খাতা বিক্রি করতে পারছে না বলে তাদের অভিযোগ।
তাদের আরও অভিযোগ, শিক্ষা অফিস ভিক্টোরি প্রকাশনার সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করে এইসব খাতা শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ খাতার উপরে লেখা সম্বলিত অন্য প্রকাশনার খাতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা ভিক্টোরি প্রকাশনার খাতা ছাড়া অন্য কোন প্রকাশনার খাতা কিনছেন না। এতে করে প্রথম বারে প্রতিটি খাতা যদি ১০ টাকা লাভে বিক্রি করা হয় তাহলে ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৩৩০ টাকা হয়। দ্বিতীয় বারেও ঠিক একই টাকা বিক্রি হবে। তাহলে এক বছরে একজন শিক্ষার্থীর কমপক্ষে তিন থেকে চার বার খাতা কিনতে হয়। তাহলে কত টাকা লাভবান হবেন শিক্ষা অফিস।
এভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিস অনিয়ম ও দূনীতি অর্ন্তরবতীকালীন সরকারের সময়েও চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ অভিবাবকরা
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, তাদের পছন্দের লাইব্রেরী থেকে সারা বছর লেনদেন করেন। বছর শেষে তারা হালখাতা করে তাদের টাকা পরিশোধ করে দেন। কিন্তু এ বছর তারা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক খাতা
কেনার ব্যাপারে বিপদে পড়েছেন।
তারা আরো বলেন, আগে তিনটে খাতা কিনতাম ৩০ টাকা দিয়ে এখন সেই তিনটা খাতা ক্রয় করতে হচ্ছে ১২০ টাকা দিয়ে। তাহলে আমরা কোথায় যাব। আগে শিক্ষকরা হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য বাংলা ও ইংরেজি বই থেকে একটি প্যারা লিখতে বলতেন। তাহলে এবছর কেন হাতের লেখা সম্বলিত খাতা কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটাই অভিভাবকদের প্রশ্ন?
তারা আরো বলেন, যার যে সমার্থ আছে সেই সমার্থ অনুযায়ী খাতা কিনবে তাহলে কেন বাধ্য করা হচ্ছে ভিক্টোরি প্রকাশনার খাতা কিনতে। আর এতে শিক্ষা অফিস ও জাহাঙ্গীর লাইব্রেরী সুবিধাভোগি ও লাভবান হচ্ছেন।
শিক্ষার্থী মাহিমা, রোজিনা, সোহেল, হৃদয়,আকলিমা, ছন্দাসহ কয়েকজন জানান, আগে আমরা ৩০ টাকা দিয়ে তিনটা খাতা কিনতে পারতাম। আর এখন ১২০ টাকা দিয়ে তিনটি খাতা কিনতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।
এত টাকা দিয়ে খাতা কিনছো কেন এমন প্রশ্রের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা অফিসের নিদের্শে স্যারেরা কিনতে বলেছে তাই কিনছি।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে জানিয়ে দিয়েছি প্রত্যেক পৃষ্টায় খাতার উপরে এক লাইন লেখা ভিক্টোরি প্রকাশনার খাতা কেনার জন্য।
কলারোয়া জাহাঙ্গীর লাইব্রেরী সত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ভিক্টোরি প্রকাশনার সাথে যোগাযোগ করে খাতা নিয়ে এসে বিক্রি করা হচ্ছে।
কলারোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসের স্যারেরা খাতার উপরের লাইন লেখা সম্বলিত খাতা কেনার জন্য বলেছেন। তবে ভিক্টোরি প্রকাশানার খাতা কেনার কথা বলেননি। অন্য স্যারেরা শিক্ষার্থীদের ওই প্রকাশনার খাতা কিনতে বলেছেন কিনা আমার জানা নেই।
উপজেলা প্রথামকি শিক্ষা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, হাতের লেখা ভালো করার জন্য খাতার উপরে লেখা সম্বলিত বাংলা, ইংরেজী ও অংক খাতা কিনতে বলা হয়েছে। তবে ভিক্টোরি প্রকাশনার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ভিক্টোরি প্রকাশনার সাথে কোন চুক্তিবদ্ধ তাদের নেই, যারা বলছেন সেটা সঠিক নয়।
৩০ টাকার খাতা ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোন প্রকাশনার খাতা কিনতে পারবেন।
ঢাকার বাংরাবাজারে অবস্থিত ভিক্টোরি প্রকাশনার কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]