সাতক্ষীরার কলারোয়ার খোরদো বাজারে জমে উঠেছে খেঁজুরের গুড় বা পাটালি বেচাকেনার হাট। বহু বছর আগে থেকে এই বাজার গুড়ের হাট নামে পরিচিত। শীত মৌসুম আসলে বাজারে খেজুরে গুড় ও পাটালী আসা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার গুড়ের ব্যাপারীরা বাজারে গুড় কেনা ও রাখার জন্য আগাম ঘরভাড়া নেন। সেজন্য শীত মৌসুম আসলেই দেখা যায় খেঁজুর গাছের গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। তবে কালের বিবর্তনে খেঁজুর গাছ হ্রাস পাওয়ায় আগের সেই জৌলুসও অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
জানা গেছে, খেঁজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস আহরণ করে সেই রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকে এ জনপদের মানুষেরা। গ্রামাঞ্চলে খেঁজুর গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য রস আগুনে জ্বালিয়ে তৈরি করেন গুড় ও গুড় থেকে তৈরিকৃত পাটালি। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে গুড় বা পাটালি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেও।
খোরদো বাজারের খোরদো-চাকলা ব্রিজ সংলগ্ন গুড়ের হাট সপ্তাহে দু’দিন বৃহস্পতিবার ও রবিবার বসে। কপোতাক্ষ তীর ঘেষা খোরদো বাজারস্থ ব্রীজের মুখ সংলগ্ন রাস্তার ধারে এ হাট সত্যি চোখে পড়ার মতো। শীতের মৌসুমে কলারোয়া উপজেলার অন্যতম প্রধান এ খেঁজুর গুড়ের হাট বেশ জমজমাট হয়ে থাকে বলে অনেকে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কলারোয়ার খেঁজুরের রসের রয়েছে আলাদা খ্যাতি বা জস। সেই খেঁজুরের রস জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় গুড় ও পাটালি। উপজেলার খোরদো বাজারে খেঁজুর গুড় ও পাটালির হাটে গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার মনিরামপুর ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৩০/৩৫ টি গ্রামের খেঁজুর গাছের গাছিরা।
গুড় বিক্রি করতে আসা দেয়াড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিন দফাদার ও জব্বার দফাদার নামের খেঁজুর গাছি জানান- এখনতো আগের মতো গাছ নেই। বিলুপ্তির পথে খেঁজুর গাছ। তাই রস এখন কম সংগ্রহ করা হয়, যা সংগ্রহ করতে পারি তাতে খরচটা কোন রকম বেঁচে থাকে। তারপর বর্তমান বাজারে এক ভাড় গুড়ের দামও কম পাওয়া যায়। যেটা কষ্ট এবং জ্বালানি খরচ হিসেবে তুলনামূলকভাবে কম।
একই ভাবে মনিরামপুরের চাকলা গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান- ব্যাপারিরা গুড়ের দাম কম বলে। যে দাম বলে, সে দামে বিক্রয় করলে লাভ তো দূরে থাক, কষ্টের মুল্যও হবে না।
দক্ষিনাঞ্চল আসা ব্যাপারিরা দাবি করেন গাছিরা তাদের সঠিক মূল্য পাচ্ছে।
তারা বলেন, গত বারের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম অনেক বেশি।
গুড়ের ব্যাপারি হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান- এবছর গুড়ের দাম বেশি। গত বছর যে গুড়ের ভাড় ছিলো ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, এ বছর সেই গুড়ের ভাড় সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ এমনকি ৬শ’ টাকা ক্রয় করতে হচ্ছে। এ গুড়ের হাট থেকে ব্যাপারিরা ভাড় ভর্তি গুড় ক্রয় করে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে চলে যান এবং প্লস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে বা বিভিন্ন উপায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ করে থাকেন। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলা গুলোর পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী ও অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
শুধু হুমায়ুন কবির নয়, বরিশাল জেলা থেকে ২/৩ জন ও কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একদল গুড়ের ব্যাপারি প্রতিনিয়ত খোরদো বাজারের গুড়ের হাট থেকে পাইকারী দামে গুড় ও পাটালি কিনে অন্যত্র বিক্রি করে থাকেন।
এদিকে স্থানীয় গুড় ব্যবসাযীরা বলেন, খোরদো বাজারের খেঁজুর গুড়ের হাট থেকে গুড় কিনে ড্রাম ভর্তি করে গোডাউনে স্টক করেও রাখেন অনেক ব্যবসায়ীরা। পরে শীত মৌসুম চলে গেলে সেই গুড় ও পাটালি চড়া দামে বিক্রয় করে থাকেন তারা।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]