কলারোয়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পানিফল। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩৭ হেক্টর জমিতে পানি ফলের চাষ হয়েছে। আর এর বাম্পার ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে চাষীদের মুখে। স্থানীয়দের কাছে এই ফল ‘পানি সিংড়া’ নামে পরিচিত। পানি ফল বেশ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।
কলারোয়া পৌর সদরের গোপিনাথপুর গ্রামের পানিফল চাষী আব্দুল আজিজ গাজী জানান, ২০০৮ সালে আজিবার নামে এক কৃষক পার্শ্ববর্তী উপজেলা কালিগঞ্জ থেকে বীজ এনে এই ফলের চাষ শুরু করেন। সেই থেকে বছর ১৩ ধরে কলারোয়ার পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পানি ফল চাষ শুরু হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ ও পতিত জমি ব্যবহারের সুযোগ থাকায় কলারোয়া উপজেলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এর চাষাবাদ।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে পানিফলের আবাদ শুরু হয় গোপিনাথপুর গ্রামের আকবর সরদারের জমিতে। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, এমনকি বিভিন্ন গ্রামে। বর্তমানে উপজেলার গোপিনাথপুর, তেলকাড়া, গোয়ালচাতর, কুশোডাঙ্গা, মুরারিকাটি,শুভঙ্করকাটি ও কেড়াগাছি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পানিফল। বাংলা ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চাষীরা পানিফলের আবাদ করেন। আর বেচাকেনা চলে বাংলা কার্তিক, অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত। যশোর সাতক্ষীরা মহাসড়কের কলারোয়া পৌরসদরের গোপিনাথপুর এলাকায় রাস্তার দু’ধারে দেখা মেলে পানি ফলের ক্ষেত। আর মহাসড়কের ধারেই পানিফল বেচতে বসে যান চাষীরা। পাওয়া যায় কলারোয়ার বাজার, বিভিন্ন মোড় ও ফুটপাতেও। বর্তমানে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও যাচ্ছে কলারোয়ায় উৎপাদিত পানিফল।
লতার মত গাছটির শেকড় নিচে থাকলেও পানির ওপরে ভেসে থাকে পাতাগুলো। অনেকটা কচুরিপানার মতো। আর ফলগুলোতে দুটি ও তিনটি শিং-এর মত কাঁটা থাকে, তাই স্থানীয়দের কাছে এটি পানিসিংড়া নামে পরিচিত। ফলগুলো দেখতে সবুজ ও লাল হয়। খোসা ছাড়ালে বেরিয়ে আসে সাদা মিষ্টি সুস্বাদু আশ।
পৌর সদরের আব্বাস ও লাভলু, তাহিদুর রহমান, ওসমান গনিসহ কয়েকজন চাষী জানান, জলাবদ্ধ জমিতে পানিফলের চাষাবাদ করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে পানিফল আবাদে ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়, আর ফল বিক্রি হয় প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকার। এর চাষাবাদ বেশ লাভজনক।
তারা জানান, প্রতি কেজি পানিফল ২০-২৫ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি হয়। আর খুচরা বিক্রয় হয় ৪০ টাকা দরে। দেশের অন্যান্য জেলায় পানিফলের চাষাবাদ হয় না। তাই মানুষ কম চেনে। কিন্তু স¤প্রতি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা থেকে এই ফল যশোর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।এ ব্যাপারে কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন,মৌসুমী ফল হলেও পানিফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এতে অনেক পতিত জমির ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানও হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]