সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় এনএটিপি প্রকল্প ফেজ-২ এর আওতায় এগ্রিকালচার ইনোভেশান ফান্ড এর ম্যাচিং গ্রান্ট উপ-প্রকল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারীদের খামার যাত্রীকরনে চপার মেশিন (খড় কাটা মেশিন) ও ক্রসার মেশিন ক্রয়ে এবং বিতরণে নানা অনয়িমের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের সুত্রে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১ জুন বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপজেলার ৬টি সিআইজি সমিতির মাঝে ১২০টি চপার মেশিন ও ৬টি ক্রসার মেশিন বিতরণ করেন। প্রতিটি সিআইজি সমিতির জন্য নিজস্ব অর্থায়ন ৩০ ভাগ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা এবং সরকার প্রদত্ত ৭০ ভাগ অর্থাৎ ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। উপজেলায় সিআইজির নিজস্ব অর্থায়ন হবে ৯ লক্ষ ৭২ হাজার এবং সরকারের বরাদ্দ ২৩ লক্ষ ২২ হাজার টাকা মোট ৩২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি ৬টি সমিতির মাঝে দেয়া হয়। এএফআই-২ ম্যাচিং গ্রান্ট নীতিমালা ১৩ অনুযায়ী প্রত্যেকটি সমিতি তাদের নিজস্ব সমিতির ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা রেখে ৫ সদস্য বিশিষ্ঠ ক্রয় কমিটি মূল্য যাচাই পূর্বক সর্বনিম্ম দরদাতাকে পে-চেক হস্তান্তর করার পর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা দেখে সরকার প্রদত্ত চেক হস্তান্তর করবেন এবং মেশিন তাদেরকে বুঝিয়ে দিবেন।
কিন্তু সরেজমিনে গত শুক্রবার উত্তর রঘুনাথপুর ছাগল পালন সিআইজির সভাপতি আরশাদ আলী পিতা জয়নুদ্দীন এর কাছে চপার মেশিন ও ক্রসার মেশিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমিসহ আরও কয়েকজন মেশিন নিয়ে এসেছি। বাকী গুলো পরে দেওয়া হবে বলে অফিস থেকে বলা হয়েছে।
অন্য সদস্য কে কে মেশিন পেয়েছে তাদের নাম জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বসতে বলে বাড়ী থেকে পালিয়ে চলে যান।
উলুডাঙ্গা ছাগল পালন সিআইজির সভাপতি সেলিম রেজার কাছে মেশিন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মেশিন আমরা এখনও পায়নি। ব্যাংকে চেক জমা দিয়েছি, মেশিন রেডী হলে বাড়ী নিয়ে আসব।
এসময় মফিজুল নামের একজন বলেন, আমি সিআইজি সদস্য না কিন্তু আমি টাকা দিয়েছি মেশিন কেনার জন্য। কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ওরা যা দিয়েছে তার থেকে ৩/৪ হাজার টাকা আমারতো বেশী দিতেই হবে।
বাঁটরা গাভী পালন সিআইজির সভাপতি সরকারী চাকুরীজীবি মফিজুল ইসলাম বাবলু জানান, আমি তো চাকুরী করি আমি সকল বিষয় বলতে পারব না আপনি আমাদের ক্যাশিয়ারের নিকট চলেন।
সেখানে গেলে আরিজুলের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, আমাদেরকে ৬টি মেশিন দেওয়া হয়েছে আর বাকী গুলো পরে দেওয়া হবে। আর আমার যেটা দেওয়া হয়েছে সেটা দিয়ে আজ বিঁচুলী কাটতে যেয়ে কাটতে পারলাম না। ব্লেডে কোন ধার নেই। যদি আমরা নিজেরা দেখে কিনতে পারতাম তাহলে ভাল মেশিন কিনতে পারতাম।
অল্প টাকার মেশিন বেশী টাকা দাম ধরে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মেশিন বিতরণের দিন গয়ড়া গাভী পালন সিআইজির সভাপতি মনিরুজ্জামান খাঁনের নিকট কয়টা মেশিন পেয়েছেন এবং কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
তবে তিনি বলেন, ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিল সকল বিষয়ে বলতে পারবেন। কারণ তিনি সবকিছুই করেছেন।
এ সমস্ত অনিয়মের বিষয়ে বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোসলেম আহম্মেদ বলেন, গত মাসিক মিটিং এ কেরালকাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সম মোরশেদ আলী বলেছিলেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসারের কোন সরকারের উন্নয়নমূলক কর্যক্রমে আমাদেরকে বলা হয় না। তিনি নিজের ইচ্ছামত সবকিছু অনিয়ম নিয়মে পরিণত করেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যাদের নামে এই মেশিন দেয়া হয়েছে, দেখবেন তারা এ বিষয়ে কিছু জানেই না। যে মেশিন তারা দিচ্ছে এ মেশিনের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা হলে পাওয়া যাবে। সেখানে তারা মূল্য ধরেছেন ২২ হাজার ৫০০ টাকা। মেশিন দেবেন হয়তো ১০ টা, বিল তুলবেন ১২০ টার।
তিনি সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিআইজি সদস্য বলেন, এ সমস্ত অপকর্মের মূল হোতা হলেন কয়লা ইউনিয়নের সীল কর্মী আশেক-ই-রাসূল সুমন। তিনি দিনের প্রায় সময়টাই কাটান উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসারের কার্যালয়ে। অফিস প্রধানের সাথে সখ্যতা থাকায় অফিসের অন্য কর্মকর্তাদেরকে থোঁড়ায় কেয়ার করেন। এমনকি উপজেলায় বিভিন্ন সিআইজি সদস্যদেরেকে তাঁকে প্রশিক্ষণও দিতে দেখা যায়।
ডা. অমল কুমার সুমনের মটরসাইকেলে ছাড়া চলেনা বললেই চলে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অমল কুমারের কাছে তালিকা চাইলে, তিনি ঔদ্ধার্তপূর্ণ আচারণ করে বলেন, তালিকা আপনাকে দেওয়া হবে না। আমি কি আপনার চাকুরী করি? আপনার কথা আমার শুনতে হবে? পারলে আপনি কিছু করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অনিয়ম এবং তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আপনি তথ্য অধিকার ফর্মে আবেদন করে আমার নিকট অনুলিপি প্রেরণ করেন, আমি বিষয়টি দেখব।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গাইনের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি গত মে মাসের ২৬ তারিখে কলারোয়াতে যেয়ে বলে এসেছি সকলকে নিয়ে সরকারের এত বড় অর্জন ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সকল সিআইজি সদস্যদের উপস্থিতিতে সকল উপকরণগুলো দিতে হবে। আপনাদের নিকট যদি কোন অনিয়ম মনে হয় তাহলে বস্তুনিষ্ট খবর প্রকাশ করুন। আমি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]