ভালোবাসা দিবস শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। ভালোবাসা দিবসের আগের দিন কমবেশি সবাই ফুল কিনে নেন। সেই ফুল ভালোবাসা দিবসে কেউ দেবে মাকে, কেউ দেবে বাবাকে, কেউ দেবে আদরের ছোট ভাই-বোনদের, কেউ বা আবার ফুল নিয়ে গোপনে রেখে দেয় মনের মানুষকে দিতে।
১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হলেও ১৩ ফেব্রুয়ারী (শনিবার) সন্ধ্যা থেকেই সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসদরের মেইন রাস্তার পাশে টিপু ফুলের দোকানে উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ে। শুধু প্রেমিক প্রেমিক প্রেমিকা নয়, ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছে আরও অনেকে। কিনতে দেখা গেছে প্রিয়জনের জন্য নানা রঙ-বেরঙের ফুল। ঘড়ির কাটায় যখন রাত সাড়ে ৮টা- এমন সময় চোখে পড়ে ফুলের দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে একজনকে ফুল কিনতে।
ফুল ক্রেতা গনি কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি আমার মাকে ফুল দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করব।'
তিনি জানান, 'আমি ৩ বছর যাবত ট্রাকে হেলপারি করি, অনেক পর আজ বাড়ি যাচ্ছি। সকালেই ভালোবাসা দিবস, তাই আমার মায়ের জন্য একটি গোলাপ ফুল কিনলাম। আমার গ্রাম থেকে সকালে কলারোয়া বাজারে আশা সম্ভব হবে না। তাই আজ রাতে কিনলাম, মাকে ফুলটি দেব। আমার বাড়ি উপজেলার হিজলদি গ্রামে।'
তবে মাকেই শুধু প্রেমিকাকে কিছু দেবেন না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'ভালোবাসা দিবস মানে কি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন? অবশ্যই না। একটু অন্যভাবে দেখলে ভালোবাসা দিবস মানে সকলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন। তাই ভালোবাসা দিবস হোক সবার প্রিয় মাকে ঘিরেই। পৃথিবীতে যদি কেউ বেশি ভালোবাসে সে হচ্ছে আমার মা। সবশেষে একটা কথাই আজ বলতে চাই, অনেক ভালোবাসি মা তোমাকে।'
এদিকে, ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রবিবার দিনভর ফুল কিনতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুল কিনতে এসেছেন।'
ফুলের দাম কেমন জানতে চাইলে রিপন নামে এক ক্রেতা বলেন, 'অস্বাভাবিক বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আগে আমরা যে গোলাপ ফুল কিনতাম ১০ টাকায় আজকে সেই ফুলের দাম নিচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একটা গোলাপ আর একটা রজনীগন্ধা ও কিছু পাতা দিয়ে একসাথে বেঁধে বানানো হচ্ছে ফুলের স্টিক। যার দাম নেয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।'
তিনি বলেন, 'কিছু করার নেই, প্রিয়জনকে দেব বলে কথা, তাই বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে ফুল।'
ফুলের দোকানে আরেকজনের হাতে আলাদা আলাদা ৫-৬টি গোলাপ দেখে এতগুলো ফুল কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি হেসে বললেন, 'আসলে ভালোবাসা দিবস তাই বাবা-মা, ভাই-বোন সবার সাথে ভালোবাসা ভাগ করে নিতে এত ফুল কেনা। এই ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে ফুল দেব। আমার পরিবারের সবাই আমার ভালোবাসার মানুষ।'
এদিন কলারোয়া পৌরসদরের বিভিন্ন স্থানে ২০-৩০টি অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমান ফুলের দোকানে নানান বয়সী নারী পুরুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান ফুলের দোকানে নানান ধরনের ফুলের সমাহার ও বেঁচাকেনা ছিলো লক্ষ্যণীয়।
তাছাড়া বাহারী পোশাক পড়ে নানান বয়সীদের হাতে-মাথায় ফুলের উপস্থিতি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
কলারোয়ার একমাত্র স্থায়ী ফুল ব্যবসায়ী টিপু বলেন, 'আমাদের দোকানে সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে, তবে করোনা ভাইরাসের কারনে এ বছর ব্যবসা তেমন ভাল না।'
তিনি বলেন, সারা বছর তেমনটা ফুলের ব্যবসা হয় না। ভালবাসা দিবসের মত কয়েকটি দিবসে কিছু ব্যবসা হয়। বছরের ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ; এসব দিবসে ফুল বিক্রি বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছর ঐ সব দিবস জাতীয়ভাবে সীমিত ভাবে ভারচুয়ালের মাধ্যেমে পালন হওয়া কোন ব্যবসা হয়নি। তাই সারা বছরের ব্যবসা এসব দিবসেকে ঘিরে করতে হবে। তাই গত কয়েক দিন ধরেই আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি।'
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]