ব্রিটিশ শাসন ও পাকিস্তানী শোষণ থেকে মুক্তির সংগ্রামে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এক অন্যন্য নাম। স্বাধীনতার জন্য এ জেলার মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস চিরস্মরণীয়। এখানকার একঝাঁক সাহসী সংগ্রামী যোদ্ধার বীরত্বে গর্বিত উত্তরের প্রাচীনতম এই জনপদ। কালের বিবর্তনে সেই সাহসী সন্তানদের নাম যেন ইতিহাস থেকে মুছে না যায়, এজন্য শহীদদের নামে কলারোয়ায় সড়কগুলোর নামকরণের দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হলে স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম পরিচয় জানানো প্রয়োজন। সমৃদ্ধ ইতিহাসের চর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে সড়কের নামকরণ শহীদদের নামে হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে সাহসী সংগ্রামী জীবিত ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামেও সড়ক হতে পারে। এর জন্য কলারোয়া পৌরসভার অভিভাবকসহ উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলকে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে।
এদিকে সচতেন মহলের অনেকেই বলছেন, গত শতাব্দীতে কলারোয়া পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে শহীদদের নামে অনেকগুলো সড়কের নামকরণ ও ফলক লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ও প্রচারণার অভাবে নামকরণের সেই ফলক ও সাইনবোর্ডগুলো বিলীন হয়ে যায়। তবে এখনো পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে দুই একটা সাইনবোর্ড এই সত্যতা ইঙ্গিত বহন করছে। শহীদদের নামে কলারোয়ার সড়কগুলোর নামকরণের দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
এ ব্যাপারে কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাস্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, কলারোয়ায় মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ হন গোপালগঞ্জের মুন্সী সাহেব আলী, মুন্সী মহাসীন আলী, সুভাষ চন্দ্র, শিশির চন্দ্র, মনোরঞ্জনসহ ৫ বীর যোদ্ধা। সেই ৫ শহীদ যুদ্ধার নামে কলারোয়ার প্রাণীসম্পদ অফিসের সামনের রাস্তা থেকে পশুহাট পর্যন্ত সড়কের নামকরণ হওয়া উচিত। এই সড়কেই ওই বীর যোদ্ধাদের রক্ত ঝড়েছে।
তিনি বলেন, এক সময় কলারোয়া শহরের অনেক সড়কের নাম শহীদদের নামকরণে হয়েছিল। কিন্তু নামকরণের পর সড়কগুলোর নাম ব্যবহার করতে আমাদের সচেতনতার অভাবে আজ সেই সব নাম হারিয়ে গেছে। ১৯৭১সালের ১৭ই মে মহান মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্মরণে দেশের উন্নয়নের প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-২০১৯ সালে কলারোয়া বাজার বলফিল্ড সংলগ্ন ৬গণকবর মেরামত ও সংরক্ষণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে অবহেলায় অযত্নে পড়ে রয়েছে এই ৫ বীর যোদ্ধার গণকবর।
বীর মুক্তিযোদ্ধারের স্মৃতি তুলে ধরে কথা বলেন এ্যাডভোকেট শেখ কামাল রেজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাস চর্চা, গবেষণা ও লেখালেখির কাজ করছেন।
তিনি বলেন, আমি নিজের চোখেই কলারোয়া পাকা ব্রীজ থেকে পাইলট হাইস্কুলের সামনে পর্যন্ত শহীদদের নামে সরণির নামফলক দেখেছি। কলারোয়া পৌরসভার দলিল অনুসারে শহরের বিভিন্ন সড়কের নাম মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের নামে হয়েছিল। ইতিহাসের চর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে সড়কের নামকরণ শহীদদের নামে হওয়া জরুরি বলে তিনি দাবী করেন।
পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবেক মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম বলেন, কলারোয়া পৌর শহরের অনেক সড়ক বিভিন্ন সময়ে নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের দায়িত্বহীনতার কারণে সেই সরণিগুলো এখন নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা অপরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশে একেকটি নাম অনেক গুরুত্ববহ। অথচ এব্যাপারে কারো কোনো উদ্যোগ নেই।
যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দীন বলেন, পৌরসভার মেয়র ও তার পরিষদ চাইলে নব্বই দশকের দলিল বের করে সড়কগুলোর নাম নিশ্চিত হয়ে পুনরায় সড়কের নামফলক ও ফলক লাগিয়ে দেয়া সম্ভব। এতে অন্তত আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে, চিনতে পারবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া কলারোয়ার বীর শহীদদের। পাশাপাশি শহীদদের নামের সড়কগুলোর নাম ব্যবহার ও প্রচার করতেও সকলকে সচেতন করতে হবে। তবেই পূর্ণতা পাবে নামকরণ স্বার্থকতা।
এদিকে, গোপালগঞ্জের মুন্সী সাহেব আলী, মুন্সী মহাসীন আলী, সুভাষ চন্দ্র, শিশির চন্দ্র, মনোরঞ্জনসহ ৫ বীর যোদ্ধার নামে কলারোয়ার প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনের রাস্তা থেকে পশুহাট পর্যন্ত সড়কের নামকরণের দাবী জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]