‘ভূয়া বিল ভাউচার বন্ধ কর’, অগঠনতান্ত্রিকভাবে অনুদানের অর্থ উত্তোলনকারীর বিচারের আওতায় আনো’’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ২২ টি ও ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে চারুকলা থিয়েটার খাত হতে সাতক্ষীরার ২৫ টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে অনুদান প্রদান করা হলেও কাজ না করে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে চার টায় শহরের নিউ মার্কেট মোড়স্থ শহীদ স. ম. আলাউদ্দিন চত্তরে প্রাক্তন নাট্যকর্মী আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মো. মুনসুর রহমান, মো. আবু বক্কর সিদ্দিকী, মো. আশিক সরদার, নুর ইসলাম প্রমূখ। এসময় হুসেন মোহাম্মাদ ক্যাপ্টেন, আহাজ উদ্দিন, রফি, মনি, মো. আব্দুল্লাহ সরদার সহ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারও সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় চারুকলা থিয়েটার খাত হতে সাতক্ষীরার ২৫টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে অনুদান মঞ্জুরী প্রদান করেন। অথচ ঐ প্রতিষ্ঠানের সংগঠকরা ভূয়া বিল ভাউচার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়ে মঞ্জুরীকৃত অনুদানের প্রাপ্ত অর্থ কাজ না করে উত্তোলন করেন। এবারও সাতক্ষীরার যেকয়টি প্রতিষ্ঠান করেছে তার মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ সাতক্ষীরা’ অন্যতম। এ সংগঠনের সভাপতি ২০০৪ সাল থেকে সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধুর নামীয় সংগঠন গড়ে রমরমা সাহিত্য ব্যবসা করে। বিগত ০৯ আগস্ট ২০১৬ সাল থেকে ১৩ জুলাই ২০২১ ইংরেজি তারিখ পর্যন্ত ঐ প্রতিষ্ঠানের নামীয় রুপালী ব্যাংক কলারোয়া শাখার ২৪৬৯ নম্বর একাউন্টে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৪’শ ১২ টাকা জমা হয়। এরমধ্যে সভাপতি নিজ ক্ষমতাবলে ভূয়া বিল ভাউচার ও রেজুলেশনের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেখিয়ে সর্বমোট ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫’শ ৫৫ টাকা উত্তোলন করেন। সম্প্রতি কোন কাজ না করে গত ১১ আগস্ট ২০২১ ইংরেজি তারিখে ২৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। যা সম্পূর্ণ সংগঠন ও দেশীয় আইন বিরোধী কর্মকান্ড। এমন কাজ শুধু ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ সাতক্ষীরা’ নামক সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি করছে তা নয়, করছে জেলা সাহিত্য পরিষদ, সাম্প্রতিক সাহিত্য ও আবৃত্তি সংসদ, সুলতানপুর সাংস্কৃতিক ও নাট্যগোষ্ঠী, ঈক্ষণ সাংস্কৃতিক সংদ, কবিতাকুঞ্জ, লিনেট ফাইন আটস, বর্ণমালা একাডেমী, জাগ্রত সাতক্ষীরা, আজমল স্মৃতি সংসদ, অধীতি একটি কন্ঠকলা, স্বরলিপি একাডেমী, সাতসুরে আমরা, জাগো যুব নাট্য সংসদ, নিউ নিজাম পুতুল নাচ, নিউ রং মহল পুতুল নাচ, দীপালোক একাডেমী, মৌচাক সাহিত্য পরিষদ, সব্যসাচী আবৃত্তি পরিষদ, সাতক্ষীরা খ্রীস্টয়ান কালচারাল একাডেমীসহ আরও অজ্ঞাত ৫ টি প্রতিষ্ঠানের সংগঠকরা। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে একই ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথেও যুক্ত। এছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই নামসর্বস্ব ও সাইনবোর্ডবিহীন। যা শুধুমাত্র সংগঠকদের পকেটের বা নিজ ঘরের বা রাস্তার ধারের খালি জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বক্তারা আরও বলেন, বছরের পর বছর ঐ সংগঠনগুলো সংগঠকরা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত বার্ষিক এককালীন অনুদান নিয়মিতভাবে গ্রহণ করে আসছে। তবে অনুদানসমূহের ব্যয়ে ভূয়া বিল ভাউচার জমা দেখিয়ে পরবর্তী বছরে আবারও অনুদান প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন এবং ঐ আবেদন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিরা যাচাই-বাছাই না করে খামখেয়ালীপনাভাবে তালিকা প্রস্তুত করেন। সেই তালিকা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি পাঠায় এবং তা অনুমোদন প্রাপ্ত হলে সংগঠনগুলোর সংগঠকদের ডেকে চেক বিতরণ করা হয়। তবে অনুদানের ব্যয়ের যথাযথ তদন্ত কখনও হয় না। সেই ব্যয়ের যথাযথ তদন্ত ও কাজ না করে যে সকল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠকরা অনুদানের টাকা উত্তোলন করছেন তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে করেন বক্তারা।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]