কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সাতক্ষীরার কলারোয়ার বিএনপি নেতা মাস্টার আব্দুস সাত্তারের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কয়লা হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
জানাজাপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন মরহুমের একমাত্র পুত্র সেনা সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মরহুমের ছোটভাই আব্দুস সালাম, কয়লা হাইস্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব প্রভাষক সালাউদ্দিন পারভেজ, জয়নগর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, বসন্তপুর মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মাস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন।
ইমামতি করেন মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ।
জানাজায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, আওয়ামীলীগ, জামায়াতসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে মরহুমের লাশ কয়লার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছুলে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভাড়ি হয়ে ওঠে। জীবনের আদালতে চিরজামিন পেয়ে বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে- এমনি আক্ষেপ করেন তারা।
উল্লেখ্য, কলারোয়ায় সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আব্দুস সাত্তার (৫৮) রবিবার (২৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
তিনি ২০২১ সাল থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন।
আব্দুস সাত্তার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের পুত্র। তিনি কয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
দলীয় রাজনীতিতে তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কয়লা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
এরআগে রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের সুপার আবুল বাশার জানান, তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় ২৭ জানুয়ারি ২০২১ সালে সাড়ে ৩ বছরের সাজায় দন্ডিত হন আব্দুস সাত্তার। এরপর থেকে তিনি জেলা কারাগারে অন্তরীন ছিলেন। ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি অসুস্থ্যবোধ করলে তাকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
পরে তার মৃত্যু খবর পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
কারাগার থেকে হাসপাতালে আনার পথে তার মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য যে, এনিয়ে এই মামলায় কারাগারে অন্তরীন চার আসামি তথা বিএনপি নেতার মৃত্যু হলো। সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার পথে বা নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারা হলেন- কলারোয়া পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি ও পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান সাবু (৫৮), জয়নগর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ও সরসকাটি গ্রামের তমেজ উদ্দীনের ছেলে বিদার মোড়ল (৫৭), কলারোয়া পৌর ছাত্রদল ও পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি জাবিদ রায়হান লাকি (৪৫) এবং উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কয়লা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন আব্দুস সাত্তার (৫৮)।
কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান সাবু ২০২১ সালের ১৪ জূন সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থতার কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান।
জাবিদ রায়হান লাকী ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট শনিবার ভোররাতে কারা হেফাজতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান।
বিদার মোড়ল কারাগারে থাকা অবস্থায় বাম পায়ে গ্যাংগ্রীনি রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২৩ সালের ২১ জুন বুধবার ভোরের দিকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আব্দুস সাত্তার ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন।
এদিকে, এই মামলায় কারাগারে অন্তরীন আরো কয়েকজন বিএনপি নেতা বর্তমানে বেশ অসুস্থ আছেন বলে দলীয় ও তাদের পারিবারিক সূত্র জানায়। তাদের মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় বলে তারা জানান।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]