মো: আবু বক্কর সিদ্দিক, কালিগঞ্জ : কালিগঞ্জ উপজেলার কিষান মজদুর ইউনাইটেড একাডেমী হাইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিম বাহারের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিম বাহারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে "নাজিম বাহারের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে, প্রধান শিক্ষকের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে, নাজিম বাহারের নরম গালে জুতা মারো তালে তালে স্লোগান দিতে দিতে কৃষ্ণনগর বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে এবং ক্যাম্পাস সংলগ্ন মাঠে মানববন্ধন করে।
তারা মানবন্ধনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, নিয়মিত ক্লাস না করা, অকথ্য ভাষা ব্যবহার, অতিরিক্ত প্রশ্ন ফি আদায়, হুমকি-ধামকি এবং ধর্মীয় বিভ্রান্তি সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে তাকে অপসারণের দাবি জানান।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এমন স্লোগানে হতবাক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয়রাসহ সচেতন মহল।
কালিগঞ্জ রোকেয়া মুনসুর ডিগ্রী মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ কাউছার তুহিন বলেন, এটা খুবই দু:খজনক ও নিন্দনীয়। একজন শিক্ষক যদি অপরাধ করে থাকে তবে তার শাস্তি বা অপসারণ দাবি করাটা স্বাভাবিক কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এ ধরনের নোংরা স্লোগান কোন ভাবেই কাম্য নয়।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের এপিপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিব ফেরদৌস শিমুল বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে নোংরা স্লোগান আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের সু-স্পট লক্ষন। এই সমস্ত শিক্ষার্থীদেরকে যদি কেউ উস্কানী দিয়ে বিক্ষোভে এ ধরনের স্লোগান দেওয়ার থাকে তবে তারা সমাজের অবক্ষয়ে সরাসরি যুক্ত।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষকের অনিয়ম থাকতে পারে। তার জন্য সে বিচারের মুখোমুখি হবে এবং শাস্তি পাবে কিন্তু এভাবে শিক্ষার্থীরা উস্কানিমূলক স্লোগান দেবে সেটা ভাবা যায়না। শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক সমাজ যদি এগুলো প্রতিকারের জন্য উদ্দ্যেগ গ্রহণ না করে তবে সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হবে এবং শিক্ষক ছাত্রের যে শ্রদ্ধা ভালবাসার সম্পর্ক সেটি নষ্ট হয়ে যাবে।
মানববন্ধনের একপর্যায়ে ইউনিয়ন কৃষকলীগ নেতা ফজর আলী গাজী, সাবেক ইউপি সদস্য তপন কুমার রায়, সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মোল্লা, যুবলীগ নেতা কাহারুল ইসলাম নয়ন সহ কয়েকজন মানববন্ধনরত শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন বন্ধ করে ক্লাসে ফিরে যেতে বলে কিন্তু তারা মানবন্ধন বন্ধ রেখে ক্লাসে ফিরে যেতে না চাইলে তাদের কাছ থেকে মানববন্ধনের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ছত্রভংগ করে দেয়।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমান মোল্লা এবং তপন কুমার রায় বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু ২দিন আগে বিদ্যালয়টির প্রাইভেট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বেশ কয়েটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে ওই প্রকাশিত খবরের জেরে প্রধান শিক্ষক নাজিম বাহারকে দায়ী করা হয় এবং ১০ম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরিক্ষা বর্জন করে। পরে তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরিক্ষা গ্রহন করা হয়। সেই থেকে প্রধান শিক্ষকের উপর বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ক্ষিপ্ত ছিল। অতি উৎসাহী একজন শিক্ষকের প্ররোচনায় শিক্ষার্থীরা আজ মানববন্ধন করছে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছে যা খুবই নিন্দনীয়।
মানবন্ধনে অংশ গ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিম বাহারের পক্ষের লোকেরা তাদের মানব বন্ধনে বাধা সৃষ্টি করে ব্যানার ছিনিয়ে নিয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিম বাহার বলেন, বিগত দুই বছর এর অধিক সময় আমি প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি পদ শুন্য রয়েছে। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় পদগুলিতে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমানের প্রাইভেট বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহন ও প্রাইভেট শিক্ষার্থীদেরকে পরিক্ষার হলে বিশেষ সুবিধা সৃষ্টিতে বাধা হয়ে দাড়ানো এবং নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হওয়ার পরে অফিস সহকারী পদে তার স্ত্রীকে নিয়োগ এবং সে নিজে পদোন্নতি নিয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করে মানববন্ধন করিয়েছে। মানববন্ধনে অংশ নেয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষক হাবিবুর রহমানের নিকট প্রাইভেট পড়ে। তার উস্কানিতেই তারা মানববন্ধন করা সহ উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে।
শিক্ষক হাবিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে মানববন্ধন বা বিক্ষোভে তার সহযোগীতা ছিল না বলে জানান।
উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাধারণ শিক্ষক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করার চেষ্টা করেছে। অনেক শিক্ষার্থীকে ভীতি প্রদর্শন করে মানববন্ধনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছেন তারা বিদ্যালয়ের কোন প্রকার নিয়ম শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছে মতো ক্লাস এবং পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন।
বিদ্যালয়টির সিনিয়র এক শিক্ষক বলেন, পূর্বেই শিক্ষদের মধ্য বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য ছিল কিন্তু এমনটি কখনো হয়নি। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটিতে আসার জন্য অনেকেই অনেকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষকদের মধ্য কেউ কেউ তাদের দ্বারা প্ররোচিত হচ্ছে যে কারণে শিক্ষকদের মধ্য আরও বেশি দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে।
এবিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, দ্রুত তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি নিরসন করা হবে।
বিদ্যালয়টির নিয়মিত কমিটি না থাকায় বিকল্প সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারে বক্তব্য নেওয়া সম্ভাব হয়নি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]