প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে চৌবাড়িয়া গ্রামের রুহুল আমিন গাজীর মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা হালিমা খাতুন। এই হালিমা খাতুনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সুবিচার প্রার্থনা করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন একই এলাকার আবুল খায়ের ওরফে বাবুর স্ত্রী নব মুসলিম আয়েশা খাতুন ওরফে উষা রানী দাস।
সরেজমিনে গেলে নবমুসলিম গৃহবধূ আয়েশা খাতুন বলেন, আমি আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলাম। সে সময় বিভিন্ন স্থানে গান করে বেড়াতাম। গান করে আমি স্বাবলম্বী হই। এরপর মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে শ্যামনগর উপজেলার গৌরীপুর এলাকার আবুল খায়ের ওরফে বাবুকে বিয়ে করি। বর্তমানে আমাদের ২টি সন্তান আছে। সাত বছর আগে কালীগঞ্জ উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকায় জমি ক্রয় করে আমরা বসবাস শুরু করি। তখন স্থানীয় হালিমা খাতুনসহ এলাকার অনেকের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক ছিল। সেসময় হালিমা খাতুন প্রয়োজনে প্রয়োজনে আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নিত। বিভিন্ন সময় তাকে নগদ টাকা দিয়ে আমরা সহায়তা করতাম। কয়েক বছর আগে আমরা একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করি এবং বাড়ির চারিদিকে প্রাচীর প্রদান করি। এরপর আমি বুঝতে পারি যে, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে হালিমা খাতুন আমার স্বামীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে ওই বাড়ি থেকে আমাকে তাড়িয়ে আমার স্বামীকে নিজের আয়ত্বে আনার চেষ্টা করছে। তখন আমি হালিমা খাতুনকে এড়িয়ে চলা শুরু করি। এরপর থেকে হালিমা খাতুন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমার স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে সে আমার বাড়ির পাশে এসে আমাদের গালাগালি করে। দিনে ও রাতে সে আমার বাড়ির ভেতরে ইটপাটকেল মারতে থাকে। সে এবং তার লোকজন দিয়ে সে আমার বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে দেয়। মাঝে মাঝে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে আমার বাড়ির আশেপাশে তাকে মহড়া দিতে দেখা যায়। তার এসকল কার্যক্রমে তার ২টা স্বামী তাকে তালাক প্রদান করেছে। সে বর্তমানে বাবার বাড়িতে থেকে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তার এসকল কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। সে আমাকে ও আমার ছোট শিশু বাচ্চাকেও একাধিক বার মারপিট করেছে। এসকল ব্যাপারে আমি প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে সে হাতে পায়ে ধরে মিটিয়ে নেয়। তারপর বাড়িতে ফিরে আবারও আমার ও আমার পরিবারের উপর নির্যাতন চালাই। কিছু বললেই সে প্রশাসনের ভয় দেখায়। তার ভয়ে এলাকার কেও মুখ খুলতে সাহস পাইনা। আমি একজন নবমুসলিম। নামাজ কালাম করি। তারপরও সে আমাকে মুচির মেয়ে অপবাদ দেয়। পাশের পুকুরে পানি আনতে গেলে সে পুকুর মালিকদের চাপ প্রয়োগ করে আমাকে পানি আনা বন্ধ কওে দেই। মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে একজন কাজের চাচি কাজ করতে আসে। হালিমা ও তার বাবা রুহুল আমিন সেই কাজের চাচীর বাড়িতে যেয়েও হুমকি দিয়েছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে সে আমার ওই কাজের চাচীর বাড়িতে পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে যেন সে আমার বাড়িতে কাজ না করে। বর্তমানে আমি হালিমার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। সে আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়ে মিমাংসার নামে আমার কাছ থেকে ইতিপূর্বে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি ও আমার পরিবার হালিমার হাত তেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি।এ ব্যাপারে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আয়েশা খাতুনের কাজের চাচী জাহানারা বলেন, আমি খুব অসহায়। এজন্য আয়েশার বাড়িতে কাজ করি। তবে হালিমা ও তার বাবা আমার বাড়িতে যেয়ে কাজ না করার জন্য হুমকি দিয়েছে। আমার বাড়িতে প্রশাসনের লোক পাঠিয়ে কাজ করতে নিষেধ করেছে। এছাড়া আমি পাশের পুকুওে পানি আনতে গেলে সে পুকুর মালিককে নিষেধ করেছে। বলেছে, মুচির মেয়ের বাড়িতে এই পুকুরের পানি যে না নিয়ে যাওয়া হয়।
আয়েশা খাতুনের মা খায়রুন্নেসা বলেন, গেীরীপুরে বাড়ী করার পর কয়েক বছর এখানে ভালভাবে বসবাস করেছে। তারপর এই হালিমা খাতুন আমার বৌমার উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করে। আমার বৌমা হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছে। এখন আমার বৌমা আয়েশা খাতুনকে তাড়িয়ে সে আমার ছেলে ও আমার ছেলের এই বাড়ি দখল করে রাজত্ব করতে চায়। এতে আমার বউমা বাধা দেওয়ায় হালিমা খাতুন ও তার লোকজন আমার বউমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা বলেন, আয়েশা খাতুনরা শ্যামনগর থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করলে সেসময় হালিমা খাতুন নগদ টাকাসহ নানান সুবিধা নিয়েছে। এখন সেই সুবিধা পাচ্ছেনা বলে হালিমা খাতুন নবমুসলিম আয়েশার পরিবারের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হালিমা খাতুনের সাথে প্রশাসনের কতিপয় দূর্ণীতিবাজ সদস্য ও তাদের সোর্সের সুসম্পর্ক আছে। সে নিজেও এলাকায় প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করে। এই পাওয়ারে সে এলাকার কাওকে মানুষ বলে মনে করেননা। এই নবমুসলিম গৃহবধূর ব্যাপারে হালিমা খাতুন বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত হালিমা খাতুন বলেন, আমি অন্যায়কে সাপোর্ট করিনা। আয়েশা খাতুনের বাড়িতে মাঝে মাঝে বহিরাগত ব্যক্তিরা আসে। সে শালিনভাবে চলাচল করেনা। আমি এসকল কার্যক্রমের প্রতিবাদ করি। এত সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে আবোল তাবোল বলছে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ শাহীন বলেন, আমাদের কাছে আসলে এ ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]